স্টাফ রিপোর্টার: ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে আজ শনিবার থেকে। তবু আনুষ্ঠানিক টিকিট বিক্রি শুরুর আগের দিনেই শুক্রবার কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীরা ভিড় করেছেন। কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে থেকে টিকিটপ্রত্যাশীদের সারি এঁকে-বেঁকে চলে গিয়েছিল স্টেশনের বাইরে। শুক্রবার কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়েছে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট।
এদিকে, অগ্রিম টিকিট ক্রয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীর চাপ কমাতে রাজধানীর ৫টি কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট রুটের টিকিট বিক্রি করা হবে। এগুলোর মধ্যে কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট; বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট; তেজগাঁও থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট; ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জগামী মোহন ও হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট এবং ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে। এবারের ঈদে প্রতিদিন রেলওয়ে ২৬ হাজার ৬৬৩টি টিকিট বিক্রি করবে। ২ মে, ৩ মে এবং ৪ মে ঈদের ছুটি ধরে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১ মে সন্ধ্যার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রার সুবিধার্থে ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এবার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ২৩ এপ্রিল থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলরত সব আন্তঃনগর ট্রেনের ডে-অফ বাতিল করা হয়েছে। ঈদের সম্ভব্য দিন ৩ মে ধরে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। সেই হিসেবে ২৭ এপ্রিলের টিকিট ২৩, ২৮ এপ্রিলের টিকিট ২৪, ২৯ এপ্রিলের টিকিট ২৫, ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ ও ১ মের টিকিট ২৭ এপ্রিল বিক্রি করা হবে। ঈদ যাত্রার বিশেষ ট্রেনগুলোর মধ্যে চাঁদপুর স্পেশাল ১ ও ২ ট্রেন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রোডে ঈদের আগে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪-৮ মে পর্যন্ত চলবে। আর দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ট্রেন ঢাকা- দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রোডে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে ও ঈদের পর ৪-৮ মে পর্যন্ত চলবে। খুলনা স্পেশাল খুলনা-ঢাকা-খুলনা রোডে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত চলবে। সোলাকিয়া স্পেশাল-১ ট্রেন ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রোডে ও সোলাকিয়া স্পেশাল-২ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রোডে শুধুমাত্র ঈদের দিন চলবে।
ঈদে অগ্রিম ট্রেনের টিকিট কিনতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন বা যে কোনো ধরনের পরিচয়পত্র অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে। একজন চারটি টিকেট কিনতে পারবে, সে ক্ষেত্রে অন্য তিনজনের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্ম নিবন্ধন অথবা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো আইডি কার্ড দেখাতে হবে। একজনের পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কিনে অন্য কেউ ট্রেন ভ্রমণ করতে পারবেন না। ঈদের ৭ দিন আগে অর্থাৎ আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেনের অফ-ডে থাকবে না এবং ঈদের পরে যথারীতি তা কার্যকর করা হবে। অফ-ডে প্রত্যাহারের ফলে অতিরিক্ত ৯২টি আন্তঃনগর ট্রেন বিশেষ ট্রিপ হিসেবে পরিচালিত হবে। ইন্টারনেটে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে ঈদ অগ্রিম টিকিট বিক্রি সকাল ৮টায় শুরু হবে। এছাড়া কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এক নাগাড়ে অগ্রিম টিকিট বিক্রয় চলবে। প্রতিটি টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রে একটি করে মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাউন্টার থাকবে। প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে শুধুমাত্র মহিলা ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য একটি করে স্বতন্ত্র কোচ সংযোজন করা হবে। একজন যাত্রী একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট ক্রয় করতে পারবে। কিন্তু ঈদের অগ্রিম বিক্রীত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। স্পেশাল ট্রেনের কোনো টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র স্টেশন কাউন্টার হতে ক্রয় করতে হবে।
সম্প্রতি রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এবার আমরা টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ স্লোগান নিয়ে টিকিট বিক্রি শুরু করেছি। এই স্লোগান বাস্তবায়নে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সম্মানিত যাত্রীদের এনআইডি বা জন্মসনদ ফটোকপি কাউন্টারে প্রদর্শনপূর্বক টিকিট ক্রয় করতে হবে।’ একজনের পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কেটে অন্য কেউ ভ্রমণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী সুজন। তিনি বলেন, ‘তার টিকিট বাতিল বলে গণ্য হবে। জরিমানা গুনতে হবে।’ কারও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এনআইডি কার্ড ছাড়া টিকিট নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ মন্ত্রী বলেন, ‘এবার ঈদে নারীদের জন্য ট্রেনগুলোতে আলাদা কোচ নির্ধারিত থাকবে। সব কোচেই নারীরা যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু ওই কোচে শুধুমাত্র নারীরাই উঠতে পারবে। এতে আমাদের যাত্রী সেবার মান আরও বাড়বে বলে আমরা আশা করি।’ ঈদে সব ধরনের ট্রেনের অফ ডে বাতিল করেছে, সেই সঙ্গে বিশেষ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।