পুলিশের মারধরে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ আহত ৭ : পুলিশের দাবি এলাকাবাসীর হামলার আত্মরক্ষার্থে হাতাহাতি
চুয়াডাঙ্গার কুন্দিপুরে মারামারি ঘটনা তদন্তে গিয়ে লঙ্কাকাণ্ড : ধাওয়া ও পালটা ধাওয়া : পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুন্দিপুর গ্রামে মারামারির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে হিজলগাড়ি পুলিশ ক্যাম্প পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ল্টুলিশের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ সাতজনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। আহতদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে হোসেন আলীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি পাঁচজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও আহতরা উভয়ের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। পুলিশ তদন্তে গিয়ে কাউকে মারধর করতে পারে না। ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। অন্যায় যেই করুক না কেন তাদেরকে শাস্তির আওয়ায় আনা হবে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। আহতরা হলেন, সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর গ্রামের বেলে মাঠাপাড়ার মৃত আব্দুল মান্নানের স্ত্রী জোমেলা খাতুন (৬৫), তার তিন ছেলে ইসরাফিল (৩৪) হোসেন আলী (৪০) ও মূসা করিম (৩০), ইসরাফিলের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা জাকিয়া খাতুন (২২), মূসা করিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন (২৬), হোসেনের স্ত্রী শিউলি খাতুন (২২)। এদিকে চিকিৎসকের প্রাথমিক ধারণা হোসেন আলীর মাথাসহ চোখে কোন শক্ত লাঠি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। পুলিশ বলছে হোসেন আলী পালানোর সময় টিনে কেটে গেলে তার কপাল। তবে পুলিশের দাবি, সম্প্রতি মারামারির ঘটনায় থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ দেখে অভিযুক্ত হোসেন আলী পালিয়ে যাওয়ার সময় টিনে তার কপাল কেটে যায়। তার পরিবারের সদস্যরা কপালে রক্তাক্ত দেখে পুলিশ মারধর করেছে বলে স্থানীয়দের সঙ্গে করে পুলিশকে ধাওয়া করে। এরপর পুলিশ আত্মরক্ষার্থে স্থানীয়দের হাতাহাতি ঘটনা ঘটেছে। কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার কুন্দিপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে হোসেন আলীর সঙ্গে একই এলাকার কদম আলীর ছেলে মোস্তফা সাথে ঈদে গরুর মাংসের জন্য করা সমিতির টাকা দেয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত মোস্তফা আলী হোসেন আলীকে অভিযুক্ত করে দর্শনা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত করতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হিজলগাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মজিবর রহমান কুন্দিপুর গ্রামে যায়। এতে অভিযুক্ত হোসেন আলী পুলিশ দেখে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ধাওয়া করে তাকে ধরার সময় ঘরের একটি টিনে হোসেনের কপাল কেটে যায়। হোসেন আলীর মাথাকেটে রক্ত বের হতে দেখলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় পরিবারের লোকজনসহ গ্রামবাসী। একপর্যায়ে হিজলগাড়ি ক্যাম্প পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ফিরে আসে। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি।
আহত হোসেন আলীর মা জোমেলা খাতুন বলেন, মঙ্গলবার আমার ছেলের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী মোস্তাফার সাথে কোন কারণে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে ওই মোস্তফা আমার ছেলের নামে থানায় অভিযোগ করে। আজ রাতে হিজলগাড়ি ক্যাম্পের দুই পুলিশ সদস্য গ্রামে আসলে আমার ছেলে ভয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমার ছেলেকে ধাওয়া করে ধরে বেধড়ক মারধর করে। এতে আমার ছেলের কপাল কেটে রক্তপাত হলে অজ্ঞান হয়ে যায়। খবর পেয়ে হোসেনের স্ত্রীসহ আমরা ঘটনাস্থলে গেলে আমাদের দেখে পুলিশরা চলে যায়। পরে দর্শনা থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আসলে আমরা প্রতিবাদ করলে আমাকেসহ মারধর করে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ আমাকে গুলি করারও হুমকি দেয়। পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আমাকেসহ তিন পুত্রবধূ ও আমার তিন ছেলেকে বেধড়ক মারধর করে।
আহত জাকিয়া বলেন, আমি ছয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার স্বামীসহ আমি ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ মনে করেছে যে আমরা তাদের ওপর হামলা করতে গিয়েছি। পরে আমার স্বামীকে খুঁজতে আমার ঘরে যায় পুলিশ। এ সময় আমার ঘরের আসবাবপত্র সব এলোমেলো করে বিছানার নিচে থাকা প্রায় দেড় লাখ টাকা নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ঘরের মধ্যে আমার স্বামীকে ধরে গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। আমি সামনে গেলে আমাকে বন্দুকের বাট দিয়ে পায়ে আঘাত করে এবং ধাক্কা দিয়ে মাটিয়ে ফেলে দেয় পুলিশ সদস্যরা। সেখানে কোনো নারী পুলিশ ছিলো না। একজন নারীকে কিভাবে পুরুষ পুলিশ সদস্য মারধর করে? আমরা এর বিচার চাই।
আহত সাবিনা খাতুন বলেন, আমার স্বামীর নামে কোনো অভিযোগ ছিলো না। তাও আমার স্বামীকে বন্দুকের নল দিয়ে মারধর করায় আমি প্রতিবাদ করি। এ সময় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আমাকেও বন্দুকের নল দিয়ে মারধর করে পুলিশ।
আহত মুসা করিম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। খবর পেয়ে বাড়ির সামনে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে মারধর করার অভিযোগ তুলে আমাকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। এতে আমার কপাল কেটে যায়।
দর্শনা থানার ওসি এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েছিল হিজলগাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে পুলিশ দেখে অভিযুক্ত হোসেন প্রাচীর টপকে পালানোর সময় কপাল কেটে যায়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডা. হাসনাত পারভেজ শুভ বলেন, হোসেন আলীর মাথাসহ চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে লাঠিসোঁটার আঘাতে হতে পারে। তবে সে শঙ্কামুক্ত। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের মধ্যে ইসরাফিলের মাথায় আঘাত আছে। তাকেসহ সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, পুলিশ রেড করতে গেলে তারা পুলিশকে ধাওয়া দেয়। পুলিশ আত্মরক্ষাতে পালিয়ে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে অভিযুক্ত হোসেন আলী ভয় পেলে পালানোর সময় টিনের চালে কপাল কেটে যায়। পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে যায়। হতে পারে আত্মরক্ষাতে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আগামীকাল (আজ) দর্শনা থানায় উভয়পক্ষকে নিয়ে বসা হবে। তিনি আরও বলেন, আগামীকাল তদন্ত করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকেও মামলা হতে পারে। পুলিশের কেউ দোষী থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।