আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা সোনাপট্টির কানা সুমন ও রেজাউল করিম নামের দু যুবক চালককে কুপিয়ে জখম করে ভ্যান ছিনতাই করার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। গত ১৪ এপ্রিল তারা আদালতে এ জবানবন্দি প্রদান করেন। আটক কানা সুমন আলমডাঙ্গা সোনাপট্টির মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে ও রেজাউল করিম আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার ইয়াছিন আলীর ছেলে।
জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল রাতে আলমডাঙ্গার কুমারী গ্রামের ইশা (৫৪) পাখিভ্যান নিয়ে ভাড়া মারার জন্য আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে যান। রাত প্রায় সোয়া দুটোর দিকে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে অজ্ঞাতনামা দু ব্যক্তি আলমডাঙ্গার ফরিদপুর দোহারপাড়া যাওয়ার জন্য ভ্যানচালক ইশা’র সাথে ১০০ টাকা ভাড়া ঠিক করেন। তিনি যাত্রীদের নিয়ে রাত আড়াইটার দিকে ফরিদপুর দোহারপাড়া জোহা ঈদগাহ মাঠের সামনে পৌঁছুলে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি তাকে পাখিভ্যান থামাতে বলেন এবং জোরপূর্বক ভ্যান ছিনিয়ে নিতে চায়। ভ্যানচালক ইশা বাঁধা দিলে ওই যাত্রি দুজন ধারালো চাপাতি দিয়ে উপুর্যুপুরি মাথা, ঘাড়ে, হাতে কুপিয়ে ভ্যানচালক ইশাকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখে পাখিভ্যানটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ ইশাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করেন। ইশা বর্তমানে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় ভ্যানচালক ইশার ছেলে রাজন আলী বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার ও পাখিভ্যান উদ্ধারের জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালায়। অভিযানের ধারাবাহিকতায় অফিসার ইনচার্জ আলমডাঙ্গা থানার নেতৃত্বে এসআই সুমন্ত বিশ্বাস, এসআই শরিয়্যতুল্লাহ ভূইয়া, এস আই মনিরুল ইসলাম, এএসআই হামিদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ গত ১৩ এপ্রিল রাতে স্টেশনে যান। সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনে পৌঁছালে ভ্যান চালকরা স্বভাবিকভাবে যে যার মতো যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। পুলিশ প্রতিটি যাত্রীর নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসাসহ গন্তব্যের স্থান জেনে সন্দেহজনক যাত্রীদের তল্লাশি করে ছেড়ে দেয়। এরই মধ্যে কয়েকজন যাত্রী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়া সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে ছিলেন। আলমডাঙ্গা থানার এসআই সুমন্ত বিশ্বাস দূর থেকে দেখে সন্দেহ হলে অফিসার ও ফোর্স নিয়ে সেখানে যান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন দৌঁড়ে পালিয়ে যান। এ সময় তাদের ধরে সাথে থাকা একটি স্কুলব্যাগ পুলিশ তল্লাশি করতে গেলে বাঁধা দেন তারা। সে সময় তাকে গ্রেফতার করতে গেলে পাশে থাকা ইট ছুঁড়ে এসআই সুমন্ত বিশ্বাস, এসআই শরিয়তুল্লা ভূইয়ার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আহত করে। পরে কনস্টেবল ওবাইদুর রহমানের সহযোগিতায় কানা সুমনকে আটক করা হয়।
ওই সময় তার ব্যাগ তল্লাশি করে দুটি চাপাতি, ১টি সেলাইরেঞ্জ, ১টি লোহা কাটার উদ্ধার করা হয়। আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কানা সুমন স্বীকার করেন সোনাপট্টির এক দোকানে ডাকাতির পরিকল্পনা করেই তারা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। স্টেশন কলোনীর মন্দিরের পেছনে তারা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এ ঘটনার পর আসামি কানা সুমনসহ অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে পুলিশকে মারধর ও ডাকাতির জন্য সমাবেত হওয়ার মামলা রুজু করা হয়।
আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কানা সুমন আরও স্বীকার করেন চালককে কুপিয়ে জখম করে ভ্যান ছিনতাই করার ঘটনায় তাদের সাথে গোবিন্দপুরের আইজুদ্দীনের ছেলে সাহাবুল ছিলো। পরে তার দেয়া তথ্যমতে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার পোড়াদহ এলাকা হতে ছিনতাই করা পাখিভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে।