চুয়াডাঙ্গায় কালবৈশাখীর তাণ্ডবে গৃহবধূর মৃত্যু : আহত আরও ৭
নববর্ষের প্রথম দিনেই বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া : বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি (ভিডিও )
আফজালুল হক:
নববর্ষের প্রথম দিনেই কালবৈশাখীর কবলে পড়ে চুয়াডাঙ্গায় এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। পৃথক ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও সাতজন। তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে দমকা হাওয়ায় গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি গ্রামের গৃহবধূ মোমেনা খাতুন। এসময় গুরুতর আহত হন তার স্বামী আমিনুল ইসলাম।
এদিকে, তারাবরি নামাজ শেষে ফেরার পথে ঝড়ের কবলে পড়েন একই উপজেলার রুদ্রনগর গ্রামের কয়েকজন। আশ্রয় নেন একটি দোকানে। ঝড়ো হাওয়ায় দোকানের প্রাচির ভেঙে চাপা পড়েন তারা। এ ঘটনায় আহত হন পাঁচ মুসল্লি।
এদিকে, সদর উপজেলার সড়াবাড়িয়া গ্রামে বাড়ির ছাদে কাজ করার সময় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আহত হয়েছেন আরও এক নারী। এছাড়া, বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণে মাচায় চাষ করা সবজির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
জানা গেছে, কালবৈশাখী ঝড়ের সময় মোমেনা খাতুন ও তার স্বামী আমিনুল ইসলাম ঘরের বারান্দায় বসে ছিল। এসময় ঘরের পাশে একটি লিছু গাছের ডাল ভেঙ্গে টিনের চালে পড়লে ঘটনাস্থলেই মোমেনা খাতুনের মৃত্যু হয় এবং তার স্বামী আহত হয়। এদিকে, নামাজ শেষে ঝড়ের কবলে পড়ে চারজন মুসুল্লি রুদ্রনগর গ্রামের স্কুলপাড়ার বকুলের ওষুধের দোকানে আশ্রয় নেয়। এসময় প্রচণ্ড বাতাসে দোকানের প্রাচীর ভেঙ্গে তাদের ওপর পড়ে। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অপরদিকে, ফুলসিরাতুল খাতুন বাড়ির ছাদে কাজ করছিল। এসময় গাছের একটি ডাল ভেঙ্গে মাথায় পড়লে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে পৃথক দুঘর্টনায় আহতরা হলেন, কুড়ুলগাছি গ্রামের নিহত মোমেনা খাতুনের স্বামী আমিনুল ইসলাম (৪৮), একই উপজেলার হাউলি ইউনিয়নের রুদ্রনগর গ্রামের স্কুলপাড়ার মৃত শমসের আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (৪০), ইসরাফিল আলীর ছেলে ইউসুফ আলী (৩৮), নূর ইসলামের ছেলে আবু বক্কর (৪০), বাক্কার আলীর ছেলে আক্কাস (৩৩), আয়ুব আলীর ছেলে নাঈম (১৫) এবং সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া গ্রামের মওলা কবীরের স্ত্রী ফুলসিরাতুল খাতুন (৪২)।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসনাত পারভেজ শুভ বলেন, আহতদের মধ্যে একজন আশংকায়। তার ঘাড়ে প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। অবনতি হলে রেফার করা হতে পারে। বাকিরা শঙ্কামুক্ত। তাদেরকে ভর্তি করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার পর্যবেক্ষণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক বলেন, সন্ধ্যার পর প্রায় আধাঘন্টা বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। এসময় বাতাসের বেগ ছিল ৬৪ কিলোমিটার এবং ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, ঝড়ের সময় টিনের চালে উপর গাছ পড়ে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তার স্বামীও গুরুতর আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি রতন বিশ্বাস জানিয়েছেন,
দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছিতে কাল বৈশাখী ঝড়ে ঘরের উপরে গাছ ভেঙে পড়ে মোমেনা খাতুন (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মোমেনা খাতুন কুড়ুলগাছি বাজার পাড়ার দিনমুজুরী আমিরুল ইসলামের স্ত্রী। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ওই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কুড়ুলগাছি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কামাল উদ্দিন।
স্থানীয়রা জানান, ইফতারের পর সামান্য কাল বৈশাখী ঝড়ে আমিরুল ইসলামের টিনের ছাউনির ঘরের উপরে থাকা পুরোন বড় লিচু গাছ ভেঙে পড়ে। এতে ঘরটি ভেঙে আমিরুলের স্ত্রী ২ সন্তানের জননী মোমেনা খাতুন গাছের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরিবারের লোকজন গাছ কেটে তার লাশ উদ্ধার করে। ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য আহসান হাবিব জানান, ইফতারের পর মোমেনা খাতুন নিজ ঘরে নামাজ শেষ করে আবার অবশিষ্ট ইফতার খেতে বসে। এসময় ঝড়ে ঘরের টিনের উপরে পুরোন লিচু গাছ ভেঙ্গে পড়ে। এসময় গাছ মাথার উপরে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তিনি। তারা খুব গরীব। দিন আনে দিন খাই।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, ইফতারের পর ঝড়ে ঘরের উপর থাকা প্রায় ২শত বছরের লিচু গাছ ভেঙ্গে পড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে কুড়ুলগাছির বাজারপাড়ার মোমেনা খাতুন নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে আছি। তারা খুব গরীব। সম্ভব হলে নিজেই কাফন কিনে দিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করে দিবো। আর ঘর তৈরির ব্যবস্থাও করে দেবো।