কুন্দিপুর গ্রামের সেই দোলার মায়ের মনে জেগেছে নানা প্রশ্ন
দর্শনায় গ্রেফতারকৃত মাদরাসা শিক্ষক গোলম কিবরিয়াকে জেলহাজতে প্রেরণ
দর্শনায় গ্রেফতারকৃত মাদরাসা শিক্ষক গোলম কিবরিয়াকে জেলহাজতে প্রেরণ
কুন্দিপুর গ্রামের সেই দোলার মায়ের মনে জেগেছে নানা প্রশ্ন
বেগমপুর প্রতিনিধি: দর্শনার মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসার ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত প্রধান শিক্ষক মাওলানা গোলাম কিবরিয়াকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। শিক্ষকের এহেন কর্মকা-ের খবর শুনে দেড়বছর আগে ওই মাদরাসায় মারা যাওয়া শিশু দোলার মায়ের মনে জেগেছে নানা প্রশ্ন। আফসানা দোলার সাথে কি কোনো খারাপ আচরণ করেছিলেন ওই শিক্ষক। নাকি কোনো ঘটনার সাক্ষী থাকার কারণে তাকে কৌশলে হত্যা করা হয়েছিলো? তবে লেবাসধারী এমন ভ- লোকের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন দোলার মা নাছরিন খাতুন।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা হল্টস্টেশন এলাকায় অবস্থিত মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ওই মাদরাসার তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়াকে বৃহস্পতিবার উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সেসময় ধর্ষণের কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি। ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা গোলাম কিবরিয়াকে গতকাল শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। বিজ্ঞ আদালতের বিচারক তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আহম্মেদ বিশ্বাস অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা আজ শনিবার সম্পন্ন হবে। একই দিন বিজ্ঞ আদালতের বিচারকের নিকট জবানবন্দি পেশ করানো হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর মাদরাসায় অস্বাভাবিকভাবে মারা যায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর গ্রামের বেলেমাঠ পাড়ার দুলালের মেয়ে আফসানা দোলা। তখন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জেনের আছরে দোলার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে। দোলার লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন সম্পন্ন করা হয়। গতপরশু বৃহস্পতিবার মাদরাসায় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে দোলার মা নাছরিন বেগমের মনে। তিনি বলেন, ‘জানি না সেদিন আমার মেয়ের সাথে কী আচরণ করা হয়েছিলো। হয় আমার মেয়ের সাথে কোনো খারাপ আচরণ করা হয়েছিলো, না হয় কোনো ঘটনার সাক্ষী ছিলো আমার মেয়ে দোলা। যার কারণে কিবরিয়া আমার মেয়েকে কৌশলে মেরে ফেলেছে। এমন ভ- মানুষের ফাঁসি চাই আমি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি জেলখানায় গিয়ে কিবরিয়াকে জিজ্ঞাসা করতে চাই আমার মেয়ে দোলা কিভাবে মারা গিয়েছে।’
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার কুচিয়ামোড় গ্রামের মৃত নাজির হোসেনের ছেলে মাওলানা মুফতি গোলাম কিবরিয়া ২০০৪ সালে দর্শনা জামে মসজিদে ইমামতির সুবাদে সপরিবারে দর্শনায় আসেন। এলাকাবাসী জানায়, মসজিদের ইমামতি করার সুযোগে দর্শনার কিছু মানুষকে নিজের করে নেন। মসজিদে ১২ বছর চাকরি করার সময় নানা বিতর্কের সৃষ্টি করেন তিনি। তবে সবসময় পরিস্থিতি বুঝে ছাতা ধরতেন। এতে অনেকের সহযোগিতাও পান তিনি। দিন দিন নানা বিষয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করলে ২০১৬ সালে মসজিদ থেকে চাকরিচ্যুত হন গোলাম কিবরিয়া। অবস্থান নেন দর্শনা হল্টস্টেশন এলাকার একটি ভাড়া বাসাতে। সেখানে খুলে বসেন মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসা। কোনোপ্রকার ব্যবস্থাপনা পরিষদ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই কৌশলে চালাতে থাকেন মাদরাসাটি। যেখানে নিজে মাদরাসার প্রধান। স্ত্রী, মেয়ে ও জামাতা মিলেই শিক্ষকতা করেন। ১ম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করানো হয় বলে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয় মাদরাসায়। ধর্মের প্রতি মুসলমানদের দুর্বলতা থাকার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আস্তানা গাড়েন মাওলানা গোলাম কিবরিয়া। এদিকে সচতেন মহল দাবি তুলেছে দর্শনায় এ ধরনের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান আছে প্রশাসন যেনো তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখে।