মৌলিক প্রয়োজনগুলো আগে প্রাধান্য দিতে হবে

সম্পাদকীয়

মানুষ বিশ্বাস করে, কোনো পট পরিবর্তনের পর তার এতোদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেবে। ব্রিটিশ-শাসিত উপমহাদেশে আমরা কী আশা করেছিলাম? ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর আমরা কী পেলাম? বস্তুত, নানান ঝড়ঝঞ্ঝার পর তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই অনেক রক্ত ঝরার ভেতর দিয়ে নতুন সূর্য উঠেছে, পুনরায় দানা বেঁধেছে নতুন স্বপ্ন।

দীর্ঘ সময়ে তৃতীয় বিশ্বের কোথাও কোথাও যতোটুকু উন্নয়নচিত্র দেখতে পাওয়া যায়, অনেকেই তা ইতিবাচকভাবে দেখতে চায; কিন্তু অবকাঠামোই কি সব? উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়েও আজকাল সুন্দর দালানের হাসপাতাল তৈরি হয়েছে; কিন্তু সেখানে কি ঠিকমতো চিকিৎসা মিলে? ডাক্তারকে কি নিয়মমাফিক পাওয়া যায়? ডাক্তার দেয়া হলেও তারা কি সেখানে থাকেন? সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, কোথায় কোন কাজটি আগে প্রাধান্য দিতে হবে, তা সর্বাগ্রে বিবেচনায় আনতে হবে। তা না হলে বাহ্যিক উন্নয়ন কখনোই সার্থকতা লাভ করতে পারে না; কিন্তু কেন এমন হয়?

তৃতীয় বিশ্বের যে সকল দেশ স্বাধীনতার আনন্দে আতশবাজি ফোটায়, তাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের মৌলিক চাহিদা সকলের আগে নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো যথাযথ পরিকল্পনা করতে পারে না এবং ঠিক কাজের যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারে না বলেই বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা আসে। তারা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেয়, পরামর্শ দেয়। দেখা যায়, উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো স্বাধীনতার পর হতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা হতে উন্নয়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ বা গ্রান্ট  পেয়েছে; কিন্তু সে ঋণ বা দানের ক্ষেত্রে কখনোই যথাযথভাবে প্রাধান্য দেয়া হয় না, কোন জিনিসটা সকলের আগে প্রয়োজন। মৌলিক চাহিদাকে গুরুত্ব না দিয়ে এমন সকল খাতে উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা সাধারণ জনগণের জীবনমানের মৌলিক সমস্যা দূর করতে পারেনি। যদি কোনো এলাকার পানির লবণাক্ততা বেড়ে যায় এবং নিরাপদ খাওয়ার পানির অভাব দেখা দেয়, যে সমস্যাটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক, সে সকল এলাকায় উন্নয়নের প্রধান মৌলিক দিকগুলোর একটি হবে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা। কারণ, নিরাপদ পানি ব্যতীত মানুষ সুস্থভাবে বাঁচতে পারে না। সূতরাং সকল ক্ষেত্রেই আমাদের মৌলিক চাহিদা আগে পূরণ করতে হবে।

উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি প্রবণতা হলো কিছু ক্ষেত্রে সরকার জানে যে লোকসান হচ্ছে, তা পরও সে লোকসান তারা বছরের পর বছর ধরে দিয়ে আসছে। কোনো এলাকায় যদি খাবার পানিতে গন্ধ থাকে, প্রশ্ন করলে হয়তো বলা হবে, তার চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। উন্নয়নশীল বিশ্বের এ ভোগান্তির জন্য রাজনীতিবিদদের দায়ী করা হয়; কিন্তু তা সর্বার্থে সত্য না।

প্রকৃতপক্ষে দায়ী হচ্ছে আমলারা। যে দেশের মানুষ নিরাপদ পানি  খেতে পারে না, তারা অন্য উন্নয়ন দিয়ে কি করবে? কিন্তু কোথায় কি কি বিষয়ে উন্নয়নকাজ হবে, তা তৃতীয় বিশ্বের আমলারা ঋণ বা দাতা সংস্থার আমলারা মিলে ঠিক করেন। সমস্যাটি তাদের; কিন্তু মধ্যখান  থেকে দায়ী করা হয় রাজনীতিবিদদের।

রাজনীতিবিদরা এক দিক থেকে দায়ী, তা হলো তারা যখন যে বিভাগের দায়িত্বে থাকেন এবং এ সংক্রান্ত কাগজপত্রে তখন তাদেরই স্বাক্ষর থাকে। সূতরাং প্রশ্ন তোলা যায়, তারা কেন স্বাক্ষর করেন এ সকল বিষয় বুঝে কিংবা না বুঝে? রাজনীতিবিদরা আমলাদের সাথে  মিলে যখন কাজ করেন তখন কোনটা আগে প্রাধান্য দিতে হবে, তা তারা বুঝে কেন কাজ করেন না? সুতরাং মৌলিক সমস্যার সমাধান না করে অন্য উন্নয়নে অধিক প্রাধান্য দিলে সমস্যা বাড়িতেই থাকবে। এ ক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো ঋণদাতা সংস্থার টাকা নিয়ে যারা নিজ নিজ দেশে উন্নয়ন করার চেষ্টা করছেন, তাদের সকলের অবস্থায় তথৈবচ। প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে তারা কি কে নিজ পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে? এজন্য যে সকল বিদেশি সংস্থা বা দাতা সংস্থা টাকা-পয়সা দেয়, তাদের নিকট এ বিষয়টি জানাতে হবে, কোনো মৌলিক বা প্রয়োজনীয় কাজগুলো আগে করতে হইব। তাা হলে উন্নয়নকাজ মানুষের কাজে লাগবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More