স্টাফ রিপোর্টার: টিপ পরা নিয়ে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় সারাদেশে রীতিমতো উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। খোদ জাতীয় সংসদেও সেই উত্তাপ আছড়ে পড়েছে। হইচই চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। উত্ত্যক্তকারী এক কলেজশিক্ষিকা সাহসিকতার সঙ্গে উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে।
পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে পুলিশ সদস্য হিসেবেই ধরে নিয়ে তদন্ত চলছে। উত্ত্যক্তকারীকে গ্রেপ্তারের পর জানা যাবে ওই ব্যক্তি সত্যিকার অর্থেই পুলিশ নাকি অন্য কেউ পুলিশের পোশাক পরিধান করে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। গত ২ এপ্রিল সকালে রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসা থেকে কলেজে যাওয়ার উদ্দেশে বের হন তিনি। সকাল সাড়ে ৮টায় ফার্মগেট সেজান পয়েন্টের সামনে পৌঁছুলে উত্ত্যক্তের শিকার হন বেসরকারি তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক ডক্টর লতা সমাদ্দার। শিক্ষিকার অভিযোগ, হেঁটে কলেজের সময় আচমকা পাশ দিয়ে যাওয়া লম্বা দাড়িওয়ালা মাঝবয়সী এক ব্যক্তি তাকে উত্ত্যক্ত করেন। তিনি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘টিপ পরছস কেন’ বলেই বাজে গালি দেন। ওই ব্যক্তির গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল। ঘটনার প্রতিবাদের এক পর্যায়ে তার পায়ের ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান ওই ব্যক্তি। গত ৩ এপ্রিল রোববার শেরেবাংলানগর থানার ওসি উৎপল বড়–য়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় ওই শিক্ষিকা একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগকারী তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক। অভিযুক্তকে শনাক্তের কাজ চলছে। অভিযুক্তের মোটরসাইকেলের নম্বর দিয়ে খোঁজ করে বিআরটিএর ওয়েবসাইটে দুটি মোটরসাইকেলের তথ্য পাওয়া গেছে।
ওসি জানান, একটি ঢাকা মেট্রো-হ-১৩-৩৯৭০ ও অপরটি ঢাকা মেট্রো-ল- ১৩-৩৯৭০ নম্বরের মোটরসাইকেল। তবে প্রথমটি বাজাজ ডিসকভার ১৩৫ সিসির। মালিকের নাম ইয়ার আলী। ২০১৬ সালের গুলশান এলাকা থেকে গাড়িটি চুরি হওয়ার পর অদ্যাবধি সেটির আর কোনো হদিস মেলেনি।
অপরটির মালিক আরশাদ আলম। মিরপুর ১২ নম্বরে থাকতেন। সেই ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে বাসা পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে পারেননি বাড়ির মালিক। কারণ বাড়ির মালিক পুলিশের তরফ থেকে সরবরাহ করা ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণ করে থানায় জমা দেননি। যদিও বাড়ির মালিকের দাবি আরশাদ চাকরিজীবী। কোনো পুলিশ সদস্য নন।
এদিকে টিপ নিয়ে উত্ত্যক্তের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ওই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে সংস্থাটি। তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির দাবিও করেছে সংগঠনটি।
রোববার দুপুরে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মহান স্বাধীনতা লাভের ৫২ বছর পরে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রে এই ঘটনা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এ ধরনের ঘটনা বাংলার আবহমানকালের জাতি ধর্ম, বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে মানুষের সাংস্কৃতিক অধিকার ও নারীর সাজ এবং পোশাকের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়েছে, সত্যিই যদি জননিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির দ্বারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়, তাহলে তাহলে রীতিমতো স্তম্ভিত হওয়ার বিষয়। সমাজে বসবাসকারী নারীবিদ্বেষী ধর্মীয় মৌলবাদ গোষ্ঠীর এ ধরনের কর্মকান্ড সম্মিলিতভাবে এখনই প্রতিহত করা দরকার। মহিলা পরিষদ নারীবিদ্বেষী ও সব ধরনের সা¤প্রদায়িকতা প্রতিরোধ ও পুনরাবৃত্তিরোধে প্রশাসনের যথাযথ দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালনের দাবি জানানো হয়।