চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব : সিঁড়িতেও যেনো জায়গা পাওয়া দায়!

হাসপাতালে শয্যার চেয়ে ১৫ গুনেরও বেশি রোগী ভর্তি : সেবা দিতে হিমশিম

স্টাফ রিপোর্টার:

চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর জায়গা হচ্ছে না হাসপাতালে। বাধ্য হয়ে বারান্দায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা ঠাঁই নিয়েছেন। রোগীর চাপে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাপাতালে শয্যার তুলনায় ১৫ গুণ গুনেরও বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। রাতে দিনে সমানে ভর্তি হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু রোগী। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অবস্থা করুণ। এ ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা মাত্র ৫টি। কিন্তু রোগী ভর্তি আছে ৮০জন। বেড পাওয়া তো দূরের কথা এ ওয়ার্ডের মেঝেতেও কোনো ঠাঁই হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা বারান্দায় ঠাঁই নিয়েছেন। এখানে যার যার মতো বিছানা পেতে কোনোরকম জায়গা করে নিয়েছেন।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে বারান্দায় চিকিৎসাধীন রোগি

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ২০০ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে ১০০-১৫০ ডায়রিয়া রোগী। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই শিশু ও বয়স্ক। সর্বশেষ গতকাল সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো ৭৫ জন। ওইদিন শিশুসহ ভর্তি হয়েছে মোট ৩০ রোগী।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, দুটি কক্ষ নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে কোনো বেড বরাদ্দ নেই। ফলে মেঝেতেই শিশুসহ রোগীদের থাকতে হচ্ছে। জায়গা না থাকায় বাইরের বারান্দা ও সিঁড়িতেও রোগীদের চিকিৎসা চলছে। সব মিলে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসা ও সেবিকারা।

শারমিনা হক নামে একজন বলেন, হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো জায়গা নেই। আজ তিন দিন ধরে সিঁড়ির ওপরই আমার দুই বছরের বাচ্চার চিকিৎসা চলছে। এখনো তার অবস্থা ভালো নয়। চিকিৎসকেরা বলছে আরও কয়েক দিন থাকতে হবে। বেড না থাকায় সিড়িতেই কষ্ট করে দিন-রাত কাটাচ্ছি। আমরা নিজেরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। বাইরে একটু কম হলেও ভিতরে রোগীর চাপের কারণে গরম বেশি লাগছে।

উজ্জ্বল মাসুদ নামে যুবক বলেন, তিন দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। গতকাল সোমবার দুপুরে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ওয়ার্ডে কোনো জায়গা নেই। বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

সুমন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল বিকেলে বন্ধুদের সাথে ফুচকা খেয়েছিলাম, পরে সন্ধ্যা থেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স মাসুমা খাতুন ও তহমিনা আক্তার জানান, ‘আমাদের এ ওয়ার্ডে মাত্র পাঁচটি বেড। কিন্তু বেডের চেয়ে ১০-১৫ গুন রোগী ভর্তি আছে। এক-দুজন নার্স দিয়ে এসব সামলানো খুবই জটিল। তারপরও আমরা প্রাণপণ চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছি। তিনি আরও জানান, ‘প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্যালাইন সরকারিভাবেই সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ওষুধের কোনো ঘাটতি হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিনকার কাজকর্মে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং সবসময় সুপেয় পানি পান করলে ডায়রিয়া রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

হঠাৎ ডায়রিয়া রোগী সংখ্যা বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এর অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ। দ‚ষিত বায়ু যখন খোলা খাবারের সংস্পর্শে আসে, তখন খাবারেও দূষণ যুক্ত হচ্ছে। এর ফলে ডায়রিয়া রোগ বাড়ছে। এছাড়াও গরমে জীবাণু অনুকূল পরিবেশ পায়। এই সময়ে জীবাণু বেশিক্ষণ বেঁচে থাকে। তাছাড়া গরমের সময় অনেকে অনিরাপদ পানি পান করেন। এতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের পরামর্শ হলো, কোন মতেই বাইরের কোনো খাবার খাওয়া যাবে না। যেখান সেখান থেকে পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পানি যদি খেতে হয় ফুটিয়ে পান করতে হবে। অন্যথায় নিশ্চিত হতে হবে পানি জীবাণুমুক্ত। সেইসঙ্গে করোনাকালীন সময়ের দুই বছরে হাত ধোয়ার যে একটা ভালো অভ্যাস তৈরি হয়েছিলো, এটা বজায় রাখতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। এটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া। আমরা নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছি। অনেক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার নতুন করে অনেকেই ভর্তি হচ্ছে। গত দু’দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ অতিরিক্ত লক্ষ্য করছি। ভর্তি রোগীর সংখ্যাই আশির ওপরে। আর বহির্বিভাগ থেকেও অনেক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ফাতেহ আকরাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন ডায়রিয়ার রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে। এছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১০০-১৫০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে একটু সচেতন হলে এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন, খাওয়া স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ আছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More