অপহরণ মামলা এবং কিশোরী বধূর আত্মহত্যার চেষ্টা

সম্পাদকীয়

একেতো অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে, তারপর পুলিশের উপস্থিতিতে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছে। পরপর দুটি ভুলের শুধুই কি কিশোরী দায়ী? অবশ্যই না। কিশোরীকে ফুঁসলে নানিবাড়ি থেকে দূরে নেয়া হয়েছে। বয়স সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য গোপন করে কাজীর কার্যালয়ে নিয়ে বিয়ের কাবিনে স্বাক্ষর নেয়ার পর গোপন স্থানে রেখে নিজবাড়িতে নেয়া হয়েছে। এরপর নানির নালিশ, অপ্রাপ্ত বয়সী নাতনিকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছে। এ অভিযোগ পেয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ অপহৃতাকে পুরাতন বাস্তপুর গ্রামের শওকত আলীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে। উদ্ধার অভিযান চলার সময় কিশোরী বধূ শ্বশুরবাড়িতে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালায়।  উদ্ধারের পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। পরে অভিযুক্ত অপহরক জিহাদকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়। কিশোরী বধূর ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিশোরীর ন্যূনতম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

বাল্যবিয়ে রোধে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আইন প্রয়োগে কঠোরতাও অবলম্বন করা হচ্ছে। যে কাজী অপ্রাপ্তবয়সীদের বিয়ে সম্পাদন করবেন তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধানও রয়েছে। এরপরও বিভিন্নভাবে প্রকৃত বয়স গোপন করে কখনো অভিভাবকেরাই অপ্রাপ্তবয়সী কিশোরীকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনছেন। কিছু কিশোরী তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারে বিভ্রান্ত হয়ে বিপথে পাড়ি জমাচ্ছে। প্রেম সম্পর্কের মোড়কে বাড়ি থেকে বের করে দূরে নিয়ে কিশোরীকে বিয়ের কাবিননামায় স্বাক্ষর করিয়ে, কিছুদিন গোপন স্থানে রেখে স্বামী সেজে ধর্ষণও করছে। এ সময় আপত্তিকর ছবি তুলে পরবর্তীতে বিয়ে অস্বীকার করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে রাখার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অপ্রাপ্ত বয়সী কিশোরীকে অপহরণ করে বিয়ের নাটক সাজানোদের আইনের আওতায় নেয়ার সংখ্যা তুলনামূলক খুবই কম। অপ্রাপ্ত বয়সী কন্যার অভিভাবকদের অনেকেরই অভিমত, মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মামলা মোকদ্দমার দিকে তেমন একটা হাঁটা হচ্ছে না। এতে অনেক অপহরক যে পার পেয়ে যাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। সমাজের চরম বাস্তব এ অবস্থার মধ্যে যখন অপ্রাপ্ত বয়সীকে অপহরণ করে গোপন স্থানে আটকে রাখার অভিযোগে মামলা রুজু হয়; তখন পুলিশি পদক্ষেপ অনিবার্য হয়ে ওঠে। বলার অবকাশ রাখে না যে, দামুড়হুদার পুরাতন বাস্তপুরে অপ্রাপ্ত বয়সী কিশোরীকে উদ্ধারে পুলিশ আইনগত পদক্ষেপ নিতে গিয়ে কিশোরী বধূর আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালানোর মতো রোমহর্ষক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। সঙ্গত প্রশ্ন, তবে কি কিশোরী বধূকে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালানোর বিষয়ে আগে থেকেই কেউ প্রভাবিত করে রেখেছিলো?

দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সের আগে কোন মেয়ের বিয়ে দেয়া যাবে না। প্রাপ্ত বয়সের আগে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার ওই কিশোরীর নেই। বয়স বুঝবে কীভাবে? দেশে জন্মনিবন্ধন বিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন না দেখে কাজী বিয়ে পড়াতে পারেন না। তা হলে অপ্রাপ্তদের বিয়ে হচ্ছে কীভাবে? জন্মবিন্ধন হয় ভুয়া দেখানো হচ্ছে, না হয় অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে কাজী তা দেখছে না। দামুড়হুদার পুরাতন বাস্তপুরের ঘটনা প্রবাহ প্রকাশ্যে আসার পর অপ্রাপ্ত বয়সীর বিয়ে সম্পাদন হলো কীভাবে তা খতিয়ে দেখা দরকার। বিয়ে সম্পাদন করা কাজীকেও যেমন আইনের আওতায় নেয়া দরকার; তেমনই দরকার কিশোরী বধূর আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালানোর নেপথ্য উন্মোচন করা। কিশোরী স্বেচ্ছায় ওই পথে পা বাড়ালে তার যে সংশোধন করা দরকার তা বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। সংশোধনাগারে প্রেরণ প্রয়োজন। অপ্রাপ্ত বয়সীকে নিয়ে সংসার পাতা ভালোই ছিলো বলে দাবি করা ব্যক্তির হয় আইনি জ্ঞানের ঘাটতি, না হয় সরল উক্তি আওড়ে বোকা বানানোর চেষ্টা। সুশিক্ষা দরকার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More