কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত দুই বছর স্থগিত থাকার পর কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে লালন স্মরণোৎসব। তিন দিনব্যাপী এ আয়োজন চলবে ১৭ মার্চ পর্যন্ত। উৎসবকে কেন্দ্র করে লালন আঁখড়াবাড়িকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। শেষ হয়েছে মাজার প্রাঙ্গণ ধোয়া-মোছার কাজও। ভেতরে বসেছে বাউল ফকিরদের আসর আর কালি নদীর পাড়ে বসেছে বিশাল মেলা। আলোচনাসভা এবং রাতভর লালন গানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে লালন মঞ্চ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়াজনে এই লালন স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এবারের লালন মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ফকির লালন শাহের অমর বাণী ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।
জানা যায়, ভাববাদী লৌকিক ধর্মের স্রষ্টা বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই তার জীবদ্দশায় ফাল্গুনের জ্যোস্নালোকের রাতে দোলপুর্ণিমা উপলক্ষে শিষ্যদের নিয়ে সাধুসঙ্গে বসতেন। তারই ধারাবাহিকতায় সাঁইজির তিরোধানের এত বছর পরও কালীগঙ্গার ধারে দিবসটি ঘিরে পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব। এই উৎসবের আর একটা ভিত্তি হচ্ছে ঠিক এমনি এক দোলের দিনে লালন সাঁইজির আবির্ভাব ঘটেছিল ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর ঘাটে। নিজের জীবদ্দশায় ৫ ঘর নিয়ে সাধুসঙ্গ করতেন লালন। সাঁইজির নিজের ঘর, দেলবার সাঁই, চৌধুরী সাঁই, পাঞ্জু সাঁই ও মহিম সাঁইজির এক ঘর নিয়ে। সাঁইজির সাধু সংঘের ধারা অনুসারে তার ভক্ত ও অনুসারীগণ এই ধারায় প্রতিবছরই দোলপ‚র্ণিমাতে সাধুসঙ্গ করছেন।
এদিকে দীর্ঘ বিরতির পরে এই সাধুসঙ্গ ঘিরে সাঁইজির অনুসারীদের মনে বইছে ¯^র্গীয় আনন্দ। সরেজমিন দেখা গেছে, লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে হাজার-হাজার ভক্ত-অনুসারীরা দ‚রদ‚রান্ত থেকে এসেছেন ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে। কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে গান গাইছেন, কেউ রান্না করছেন। তারা যশোর, ঢাকা, চাঁদপুর, ঝিনাইদহ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন, আলোচনা সভা শেষে মঞ্চে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। যা গাইবেন লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউল শিল্পী ও ভক্তরা।
লালন একাডেমির সদস্য সচিব ও সহকারী কমিশনার সবুজ হাসান বলেন, লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।