তরুণরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিশ্বে বলতে পারবে আমরা বাঙালি
চুয়াডাঙ্গায় স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনাসভায় ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি বলেছেন, তরুণরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিশ্বে বলতে পারবে আমরা বাঙালি। এ পরিচয় বুকে ধারণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে। আমরা বিভিন্নভাবে দেশকে ভালবাসবো। খেলুাধুলা চর্চ্চা করবো।’ গতকাল শনিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা কোর্টমোড়ে সদর ডাকবাংলো চত্বরে জেলা পরিষদ আয়োজিত মহান স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অ.দা.) সাজিয়া আফরীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আবু তারেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার সাইদুর রহমান-বীরপ্রতীক বক্তব্য রাখেন। অন্যান্যের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ জকু বক্তব্য রাখেন। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ ও জেলা পরিষদ সদস্য শহিদুল ইসলাম শাহান সভা সঞ্চালনা করেন। সভার শুরুতেই প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও আগত আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করা হয়। এসময় পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন জেলা পরিষদ মসজিদের ইমাম বায়েজিদ হুসাইন ও গীতা পাঠ করেন সুনীল মল্লিক। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ সদস্য খলিলুর রহমান, মিজানুর রহমান, শফিউল কবীর, নুরুন্নাহার কাকলি, কাজল রেখা ও হাছিনা খাতুন, জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী আনিছা খানম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রোকনুজ্জামান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রমজান আলী, প্রধান সহকারী ইসরাইল হোসেন, হিসাবরক্ষক আসলাম উদ্দিন ও সিএ জালাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথিদের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও জেলা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি আরো বলেন, এ দেশ কারো দয়ায় আসেনি। বিনা রক্তে কোনো অর্জন বাংলাদেশের মানুষ করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবি পেশ করলেন। এদশের মানুষের প্রতি চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হতো। তারা সুযোগ সুবিধা দেয়নি। পাকিস্থানীরা বললো, ৬ দফা দাবি ভারতের ‘র’ দেয়া । ওইদিন যদি ভূট্টোর কথা না শুনে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনতো তাহলে ৭ মার্চের ভাষণ দিতে হতো না। পূর্ব পাকিস্তানের নেতা বঙ্গবন্ধু হবে তারা চায়নি। বাঙ্গালিদের শেষ করার জন্য সেনাবাহিনী ও গোলাবারুদ পাঠাতে লাগলো। বঙ্গবন্ধুর নামে আগরতলা মামলা হলো। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার কারণে ফাঁসি দেয়া হবে। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলো, জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো। পরের দিন বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো। বাঙ্গালি জাতির শোষণ-গঞ্জনা থেকে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের ২৩ বছরের মধ্যে সাড়ে ১৩ বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। এই জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় সামরিক ও রাজনৈতিক কমান্ড তৈরী হয়েছিলো। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গার তৎকালিন ইপিআর ক্যাম্পে গেলে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক নেতা ডা. আসাবুল হক, অ্যাড. ইউনুছ আলী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বে রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর হয়েছি। ক্যাপ্টেন আজমের নেতৃত্বে কমান্ড কাউন্সিল কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে ১৫০ জন পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়। আমরা চুয়াডাঙ্গাকে মুক্ত করতে পেরেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদ ও ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এ ডাকবাংলোয় এসেছিলেন। চুয়াডাঙ্গাকে রাজধানী ঘোষণা করার কথা ছিলো। পরবর্তীতে এখানে তুমুল বোমাবর্ষণ শুরু হয়। শ্রীমন্ত টাউন হল মুক্তিযুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা হতো। বাংলাদেশ ইতিহাস বহন করে। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গাকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলাম। আমাদের কিছু মানুষ আহত হয়েছিলো কুষ্টিয়ায় যুদ্ধে। আমাদের মুরুব্বিরা যে সিদ্ধান্ত দিতেন আমরা মেনে নিতাম। বঙ্গবন্ধু যদি ২৫ মার্চ ধরা না দিতেন আরো কোটি মানুষ মারা যেতো। পাকিস্তানীরা বলতো আমরা মানুষ চাইনা, আমরা মাটি চাই। বাংলার মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি পরিবারকে টর্চার করা হয়েছে। ্এই মার্চে রক্ত দিতে হয়েছে। এ মাসকে স্মরণ না করলে হবে না। মানুষকে ইতিহাস জানতে হবে। দেশ না চিনলে অনেক কিছু অসমাপ্ত থেকে যায়। বঙ্গবন্ধু সুখী সমৃদ্ধ ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। ঘাতকের বুলেটে প্রাণ দিতে হয়েছে। বাবার স্বপ্ন পূরণে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ব বলছে বাংলাদেশ রোল মডেল । ১৯ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও ভূখন্ডকে মানতে পারবে তারা এদেশে বসবাস করবে। যারা মানবে না তাদের পাকিস্তান চলে যেতে হবে।