আলমডাঙ্গার যমুনায় সড়কে গাছ ফেলে তিনঘণ্টা তাণ্ডব ডাকাতদলের
যানবাহন আটকে চালক ও যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি : নগদ টাকাসহ মালামাল লুট
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গা জামজামির যমুনার মাঠে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে যাত্রীবাহীভ্যান, প্রাইভেটকার ও বালিবোঝায় ট্রাকের গতিরোধ করে ডাকাত দল। পরে ওইসব বাহনে থাকা লোকজনকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। পরে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকাসহ সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায় ডাকাতদল। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আলমডাঙ্গা-জামজামি বাজার সড়কের মধ্যবর্তী যমুনার মাঠে এ ঘটনা ঘটে। যমুনায় ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ওই এলাকায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ পথচারীদের মাঝে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা-জামজামি বাজার সড়কে মধ্যবর্তি বড়মাঠ যমুনার মাঠ। রাতে জনশুন্য এ মাঠের সড়কে সন্ত্রাসী-চরমপন্থীদের অভয়াচারণ ভূমি হিসেবে কুখ্যাতি থাকলেও সরকারের উন্নয়নের ছোয়ায় কার্পেটিং সড়কে যোগাযোগ সুবিধায় দ্রুত র্যাব-পুলিশের টহলে অপতৎপরতায় প্রায় জিরো। তবে গত ১ মার্চ দিনগত মধ্যরাত ১টার দিকে ৭-৮ জনের একদল ডাকাত রাতে কয়েকঘণ্টা যমুনায় সড়কের জামতলায় ইপিলইপিল গাছ কেটে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে শুরু করে তা-ব।
ডাকাতদলের হাতে নগদ টাকা খুইয়ে জামজামির মৃত আব্দুল মজিদ বিশ্বাসের সেজো ছেলে গোলাম কিবরিয়া জানান, রয়েল এক্সপ্রেস কোচে তিনি ও তার ক্যানসারে রোগাক্রান্ত শশুর আলমডাঙ্গার আসানগরের শাকের মন্ডল গত পরশু মঙ্গলবার দিনগত রাতে সাড়ে ১২টার দিকে আলমডাঙ্গা টার্মিনালে নামেন। এ সময় এখানেই জামজামির খামারপাড়া গ্রামের মৃত মনছের আলির ছেলে জামিমুলকে পেয়ে তার ভ্যানে ১৫০ টাকা ভাড়া ঠিক করে ওই রাতেই শ্বশুরকে আসাননগরে নামিয়ে দিয়ে জামজামি বাজারের উদ্দেশ্যে ওইরাতে একই ভ্যানে যাত্রী হয়ে ওঠেন। তাকে বহনকৃত জামিরুল যমুনা মাঠের যমুনা জিকে ব্রিজ সংলগ্ন সড়ক পার করেই ব্যারিকেডে আটকে পড়ে। ডাকাতদলের পেতে রাখা ফাঁদ ভেবে পিছে ফিরতেই ৭-৮ জনের ওই ডাকাত তাদের আটকে ফেলে। ধারালো হেসো-রামদা উচিয়ে ডাকাতদের একজন ভ্যানচালক জামিরুলের গলায় রামদা ধরে কর্কশ গলায় বলে পালাচ্ছিস, ভয় করছে। আরোহী কিবরিয়া বলেন, ভয় তো করেই। ডাকাত বলে যা বলি শোন, মোবাইল টাকা পয়সা যা যা আছে দিয়ে দে। মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে বন্ধ করে রাখে। গোলাম কিবরিয়ার প্যান্টের পকেট থেকে তিন হাজার ৭শ ৪২ টাকা নগদ ও ব্যাগে থাকা ছেলের নতুন গেঞ্জিটিও হাতিয়ে নেয়। তাকে ও ভ্যানচালককে ভ্যানের উপরে পিঠমোড়া করে বেঁধে বসিয়ে রাখে। রাত ৪টা অবধি তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখে দেয়। এ সময়ের মধ্য জামজামি বাজার থেকে আলমডাঙ্গা অভিমুখী প্রাইভেটকার এ ফাঁদে আটকে গাড়িসমেত চালককে জিম্মি করে হাতিয়ে নেয় নগদ টাকা। শেষাবধী আলমডাঙ্গা থেকে জামজামি বাজার অভিমুখী বালিবোঝায় ড্রাম ট্রাক একইভাবে এ ফাঁদে আটকে যায়। ডাকাতদল ধারালো অস্ত্রের মুখে ট্রাকের ড্রাইভারকে জিম্মি করে নগদ ১৭ হাজার টাকা লুট করে নেয় বলে তিনি দাবি করেন।
অজ্ঞাত এ ডাকাতদল সটকে যাবার সময় মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দিয়ে বলে বন্ধ মোবাইল এখন বন্ধ রাখবি। কোন সাড়াশব্দ করবিনা যার যার মত ফিরে যা বলেই দ্রুত পালিয়ে যায়। গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাসের স্ত্রী রোজিনা খাতুন বলেছেন, স্বামী রাতে নাইট কোচ থেকে নেমে তাকে ফোন করে বলে এলাকার ভ্যান পেয়েছি, ফিরছি। ৩ ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে না ফিরতে দেখে মোবাইলে কল দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন বলতে থাকে। ভয়ে উৎকন্ঠায় সময় যেতে চাইনা। অবশেষে লাইট হাতে বাড়ির গেটে সময় গুনতে থাকি। রাত সাড়ে ৪টার পরে বাড়ি গেটে পৌঁছে কান্না করে বলে সব শেষ। বাবা ক্যান্সারের রোগী। কি হলো? হাউমাউ করতেই বলে ডাকাতে ধরেছিলো। প্রাণে বেঁচে ফিরেছি।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ডাকাতির বিষয়ে কিছুই জানা নেই। রাতে তো ওই সড়কে পুলিশি টহল ছিলো। তারপর এই ডাকাতি বিষয়টি তিনি দেখবেন। ডাকাতদল দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা জোরদার করবেন বলে জানান তিনি।