স্টাফ রিপোর্টার: প্রথম ম্যাচে আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে এসেছিল জয়সূচক বাউন্ডারি। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেই আফিফই বল হাতে টানলেন তুলির শেষ আঁচড়। ৪৬তম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই ফজল হক ফারুকিকে তিনি বোল্ড করার সঙ্গে সঙ্গে ২১৮ রানে অলআউট আফগানিস্তান। তাতে নিশ্চিত হলো ৮৮ রানের বড় জয়, এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়ও। আরও বড় প্রাপ্তি, আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। এত অর্জনেও মাঠে নির্লিপ্ত উদযাপন সাকিব-তামিমদের। যেন জয়টা আগেই নির্ধারিত ছিল। ছিলই তো…। টস জেতা তামিম ইকবালের প্রত্যাশা ছিল ২৬০ রান। এই রানেই প্রতিপক্ষকে হারানোর বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশ অধিনায়কের। ফিল্ডিংয়ে নামার আগে অধিনায়ক নিশ্চিত জয়ের ছবিটা দেখে ফেলেন। লিটন দাসের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি (১৩৬) ও মুশফিকুর রহিমের হাফ সেঞ্চুরিতে (৮৬) যে ৩০৬ রানের পাহাড় গড়ে স্বাগতিকরা।
টানা দুই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ এখন বাংলাদেশের। অন্য সময় হলে সোমবারের তৃতীয় ম্যাচটি নিয়ম রক্ষার হয়ে যেত। কিন্তু সুপার লিগের অংশ হওয়ায় প্রতিটি ম্যাচই এখন সমান গুরুত্বপূর্ণ। ১৪ ম্যাচে ১০ জয়ে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ১৫ ম্যাচে ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নেমে গেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জিততে পারলে আরও বড় একটা অর্জন ধরা দেবে। পাকিস্তানকে টপকে টাইগাররা পৌঁছে যাবে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংরকিংয়ে ছয় নম্বরে।
ব্যাটারদের গড়ে দেওয়া ভিত কাজে লাগিয়েছেন স্বাগতিক বোলাররা। সাত বোলার বোলিং করে কেউই খালি হাতে ফেরেননি। সবাই উইকেট পেয়েছেন। রিয়াজ হাসানকে রানআউট করে উইকেট তোলার শুরু। এরপর মোস্তাফিজুর রহমান আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে ও আজমাতুল্লাহ ওমরজাইকে সাকিব আউট করলে ৩৪ রানে তিন উইকেট নেই সফরকারীদের। চতুর্থ উইকেটে নাজিবুল্লাহ জাদরান ও রহমত শাহর ৮৯ রানের জুটিতে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ পড়ে স্বাগতিকদের কপালে। দুজনকেই ফেরান পেসার তাসকিন আহমেদ। এরপর হুড়মুড় করে সাজঘরে ফিরেছে আফগানরা। তাসকিনের পর সাকিবও নেন দুটি উইকেট। আগের ম্যাচের চেয়ে আফগানদের উন্নতি মাত্র তিন রানের। প্রথম ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল ২১৫ করে, কাল ৪৫.১ ওভারে ২১৮ রানে। আগের ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা জাগানো আফগানিস্তান কাল তিন পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। ওই ম্যাচে ফারুকির সাফল্য দেখেই কিনা, সফরকারীরা দ্বিতীয় ম্যাচে আরেক বাঁ-হাতি পেসার ফরিদ আহমাদ মালিককে নামিয়ে দেয়। কিন্তু এলোমেলো বোলিংয়ে তিনি আলগা করে দেন চাপ। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে দুটি চার মারলেও অধিনায়ক তামিম আউট হয়ে যান ১২ রানেই। আগের ম্যাচের মতোই তিনি ফেরেন ফারুকির বলে। শুরুতে টাইমিং ঠিকঠাক হচ্ছিল না লিটনের। ওয়ানডাউনে নামা সাকিবের ব্যাটিংও সাবলীল ছিল না। রশিদ খান আক্রমণে এসে দ্বিতীয় বলেই ফেরান এই বাঁ-হাতি অলরাউন্ডারকে। সাকিব করতে পারেন ২০ রান। লিটনের ব্যাটে ততক্ষণে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে ৮৩ রানে। লিটন ও মুশফিকের মহাকাব্যিক জুটির শুরু সেখান থেকে। মুশফিক শুরুতে ছিলেন সাবধানি। লিটনও টিকে থাকার লড়াই করে গেছেন। আস্তে আস্তে হাত খুলতে থাকে তাদের। রানরেট থাকে ছয়ের আশেপাশে। লিটন পঞ্চাশে পা রাখেন ৬৫ বলে, মুশফিক ৫৬ বলে। আরও এগিয়ে যাওয়ার পথে একটি করে জীবন পেয়েছেন দুজনই। ৮৭ রানের মাথায় মুজিব উর রেহমানের বলে শর্ট কাভারে লিটনের সহজ ক্যাচ ছাড়েন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি। পরে রশিদ খানকে বাউন্ডারি মেরে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। ৪৯ ইনিংসে ধরা দিল পঞ্চম সেঞ্চুরি। দেশের হয়ে দ্রুততম পাঁচ সেঞ্চুরির রেকর্ডে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিবের লেগেছিল ৯৩ ইনিংস। তিন অঙ্কে পৌঁছুতে লিটনের লাগে ১০৭ বল। পরের ১৯ বল থেকে লিটন আদায় করে নেন ৩৪ রান। তার ইনিংসে ১৯টি চার ও দুটি ছক্কা। ফারুকির বলে একটি ছক্কা পূর্বপাশের গ্যালারির উপরের তলা স্পর্শ করে। এই জুটি থামে দুইশ পেরিয়ে (২০২)। ওয়ানডে ক্রিকেটে তৃতীয় উইকেটে এটাই বাংলাদেশের প্রথম দুইশ রানের জুটি। শুরু থেকে খরুচে ফরিদ পরপর দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন। সেøায়ার শর্ট বলে পুল করে ক্যাচ দেন লিটন। পরের বলে মুশফিক আরেকটি শর্ট বলে আউট হন থার্ডম্যানে। ৬৯ রানে জীবন পাওয়া মুশফিক ফিরলেন সেঞ্চুরির খুব কাছ থেকে। নয় চারে তিনি করেন ৯৩ বলে ৮৬। এই জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশ দ্রুত রান তুলতে পারেনি।
শেষ চার ওভারে বাউন্ডারি হয়েছে মাত্র একটি। নয় বল খেলে মাহমুদউল্লাহ করেন মাত্র ছয় রান। আফিফ হোসেন ১২ বলে করেন ১৩* রান। তার আগেই অবশ্য বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে নিরাপদ অবস্থানে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
সেনাসদস্যসহ নিহত ১৩৭ : ইউক্রেনের সঙ্গে তৃতীয় কোনো দেশে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রাশিয়া
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ