স্টাফ রিপোর্টার: একাদশ শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য সারা দেশে ভর্তিযোগ্য কলেজ রয়েছে ৪ হাজার ৭৬২টি। এসব কলেজে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ২৫ লাখ ৩০ হাজার ৩০৩টি। কলেজগুলোতে আসনের কোনো স্বল্পতা না থাকলেও দেশে ভালো মানের কলেজের সংকট রয়েছে। ৮ জানুয়ারি ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার পর ভর্তির জন্য প্রথম দফার ফলাফলে দেখা গেছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এক লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থী। আর এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েও পছন্দের ভালো মানের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাননি ১২ হাজার ১৬০ জন ছাত্রছাত্রী। অন্যদিকে দেশের ১৩১টি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে কোনো ছাত্রছাত্রীই ভর্তি হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, ঢাকা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, কলেজগুলোতে পড়ালেখার মান বাড়াতে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ আর তদারকি না থাকার কারণে কিছু কলেজে শিক্ষার্থীরা ভর্তির আগ্রহ দেখায় না।
তথ্যমতে, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২১-এর ফলাফলে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পাস করেছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর চেয়ে কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫৭টি আসন বেশি রয়েছে। জানা গেছে, দেশে প্রায় ৫ হাজার কলেজ থাকলেও তুলনামূলক ভালো মানের কলেজের সংখ্যা দুই শর মতো। এসব কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার। এ কলেজগুলোতে ভর্তি হতেই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি থাকে। অথচ এসএসসি ও সমমানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য কলেজের সংখ্যা ৩৩৩টি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এমন কলেজ রয়েছে ১ হাজার ৪২টি। এ ছাড়া কুমিল্লা বোর্ডে ৪২৯টি, রাজশাহী বোর্ডে ৭৯৮টি, যশোর বোর্ডে ৫৮২টি, চট্টগ্রাম বোর্ডে ২৭৭টি, বরিশাল বোর্ডে ৩৫১টি, সিলেট বোর্ডে ৩০৬টি, দিনাজপুর বোর্ডে ৬৮৫টি ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে একাদশে ভর্তিযোগ্য কলেজ রয়েছে ২৯২টি। সারা দেশে এত কলেজ থাকলেও এখনো ভর্তির সুযোগের বাইরে রয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থী। একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সর্বনিম্ন ৫টি কলেজ ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা তুলনামূলক ভালো কলেজগুলোতে আবেদন করাতেই বেধেছে বিপত্তি। কোনো পরীক্ষা ছাড়াই এসএসসি ও সমমানের ফল, প্রাপ্ত নম্বর আর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে অটোমেটেড পদ্ধতিতে ভর্তির ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তির আবেদনের সময় তুলনামূলক ভালো মানের কলেজগুলোতেই আবেদন দিয়েছে তারা। আর তুলনামূলক কম মানের কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য আবেদনে আগ্রহ দেখায়নি শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোনো অঞ্চলে কলেজের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না সেটি ম্যাপিং বা যাচাই না করেই রাজনৈতিক তদবির বা প্রভাবশালীদের তদবিরে কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব কলেজে শিক্ষার মান যথাযথভাবে রক্ষা হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীরাও এসব কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে তেমন একটা আগ্রহ দেখায় না। সরকারের উচিত যথাযথভাবে ম্যাপিং ও মনিটরিং করে কলেজের অনুমোদন দেওয়া। একই সঙ্গে বিদ্যমান কলেজগুলোতে শিক্ষার মান বাড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, ঢাকার কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো কলেজকে খারাপ কলেজ বলা যায় না। শিক্ষার্থীরা একটি কলেজে ভর্তি হয়ে ভালো ফল করলেই কলেজের সুনাম বৃদ্ধি পায়। অনেক কলেজ রয়েছে, যেখানে ভর্তি হয়ে এসএসসিতে মন্দ ফল করা শিক্ষার্থীরা ভালো ফল অর্জন করে। আবার অনেক কলেজ রয়েছে, যেগুলোতে ভর্তি হয়ে এইচএসসিতে খারাপ ফল পেয়েছে। তিনি বলেন, এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এটি চলবে। ভর্তি কার্যক্রম সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পর বলা যাবে কোন কলেজে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়নি। প্রসঙ্গত, ৮ জানুয়ারি একাদশে ভর্তিতে আবেদন শুরু হয়। প্রথম দফায় আবেদন চলে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হয় ২৯ জানুয়ারি। ৭ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ে অনলাইনে আবেদন করা যাবে। এ আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ ফেব্রুয়ারি। ১৩ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দফায় আবেদন গ্রহণের পর ১৫ ফেব্রুয়ারি ফল প্রকাশ করা হবে। ১৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলেজগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম চলবে। ২ মার্চ থেকে কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ