চুয়াডাঙ্গায় নিখোঁজ স্কুলছাত্র আবু হুরায়রার সন্ধান মেলেনি পাঁচ দিনেও
স্টাফ রিপোর্টার: গত পাঁচ দিনেও সন্ধান মেলেনি চুয়াডাঙ্গা তালতলা গ্রামের নিখোঁজ স্কুলছাত্র আবু হুরায়রার। গ্রামের বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও ঘটনার কোনো কূলকিনারা খুঁজে পায়নি পুলিশ। এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে সময় কাটাচ্ছে আবু হুরায়রার পরিবার। শিশু আবু হুরায়রার ভাগ্যে কী জুটেছে তা কেউই অনুমান করতে পারছে না। তবে তাকে জিনে নিয়ে গেছে বলে যে গুঞ্জন উঠেছিল তাতে আমল দিচ্ছে না তার পরিবার। বরং জিনের কথা যারা বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান তারা।
জানা গেছে, আবু হুরায়রা (১১) চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা মাদরাসাপাড়ার ভুট্টাব্যবসায়ী ও কৃষক আব্দুল বারেকের একমাত্র ছেলে। সে এবার লটারির মাধ্যমে সুযোগ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) শিশু আবু হুরায়রা প্রতিবেশী প্রাইভেট শিক্ষক রনজু আলীর কাছে অন্যান্য দিনের মতো প্রাইভেট পড়তে যায়। বেলা ৪টায় পড়তে যাওয়ার কথা থাকলেও সে যায় আধাঘণ্টা আগে। এ সময় প্রতিবেশী প্রাইভেট শিক্ষক বাড়িতে ছিলেন না। ছিলেন শিক্ষকের মা। শিক্ষক রনজু আলী চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি জানান, ‘ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টায় আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার মা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় আবু হুরায়রা আমাদের বাড়িতে স্কুলব্যাগটি রেখে বাইরে বেরিয়ে যায়। আমি বাড়িতে ফিরে আর পাইনি তাকে।’
আবু হুরায়রার পিতা আব্দুল বারেক মাথাভাঙ্গাকে জানান, ‘আবু হুরায়রা একা একাই প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে যায়। ওই দিন সে ব্যাগ নিয়ে পড়তে বের হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা নিশ্চিন্তে ছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে আমার স্ত্রী আবু হুরায়রার কথা জিজ্ঞেস করে। আমি রনজু আলীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি আবু হুরায়রা বইয়ের ব্যাগ রেখেই চলে গেছে। এ কথা শোনার পরই তাকে খুঁজতে শুরু করি। কিন্তু কোথাও তার হদিস পাচ্ছি না।’ আবু হুরায়রার মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘এই পাঁচটা দিন আমাদের খাওয়া দাওয়া নেই। চোখে ঘুম নেই। মোবাইলে কল এলেই আমাদের বুকের ভেতর ধক করে উঠছে। হয়তো কোনো খবর পাবো।’
আব্দুল বারেকের ছয় মেয়ের পর অনেক আরাধনা করে জন্ম নেয় একমাত্র ছেলে আবু হুরায়রা। আদরের ছেলে আবু হুরায়রা নিখোঁজের পর থেকেই তাদের নির্ঘুম রাত কাটছে জানিয়ে আবু হুরায়রার বোনরা জানান, ‘আমাদের তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। বাকি তিন বোন লেখাপড়া করছে। ভাই নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনে আমরা শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছি। আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। আমরা অধীর আগ্রহে মুহূর্ত পার করছি; হয়তো কখন ছোট ভাইয়ের সন্ধান পাবো।’
তালতলা গ্রামসূত্রে জানা গেছে, মাস ছয়েক আগে এক রাতে আব্দুল বারেকের বাড়ি থেকে মুরগি ও গাছের কামরাঙা চুরির ঘটনা ঘটে। গ্রামের কয়েক যুবক এ ঘটনা ঘটনায়। এ নিয়ে সালিসও বসে গ্রামে। আবু হুরায়রা নিখোঁজ হওয়ার নেপথ্যে ওই যুবকদের কারো হাত থাকতে পারে কি না তা নিয়েও কারো কারো সন্দেহ আছে। তবে পুলিশ জানায়, ওই যুবকদেরও এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে প্রাইভেট শিক্ষক রনজু আলীকেও।
একটি সূত্র জানায়, শিশু আবু হুরায়রা নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে ব্যাপকভাবে গুঞ্জন ওঠে তাকে জিনে তুলে নিয়ে গেছে। পয়সাকড়ি দিলে জিন নাকি তাকে ফেরত দিয়ে যাবে। সিরাজগঞ্জ জেলার কথিত জিন চালনাকারী এক কবিরাজের সাথে ধন্দে পড়ে যোগাযোগ রাখেন আবু হুরায়রার বাবা আব্দুল বারেক। সর্বশেষ গত শনিবারও ওই কবিরাজের সাথে কথা হয় তার। কবিরাজ ৩০ হাজার টাকার দাবি করেছিলেন। বলেছিলেন, রোববার সকাল ১০টায় আবু হুরায়রাকে ফিরে পেলে ৩০ হাজার টাকা দেবেন। তাতেও রাজি ছিলেন আব্দুল বারেক। গতকাল রোববার অধীর আগ্রহে ছিলেন তিনি। কিন্তু না আবু হুরায়রা ফিরে আসেনি। এ ব্যাপারে নিখোঁজ শিশু আবু হুরায়রার বড় বোন বলেন, ‘ওটা একটা চক্র। ওরা জিনের দোহাই দিয়ে পয়সাকড়ি কামায়। ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ রইল।’ আবু হুরায়রার পিতা আব্দুল বারেক বলেন, ‘আমার সাথে গ্রামের কারো কোনো বিরোধ নেই। তাছাড়া আমার অবুঝ ছেলে আবু হুরায়রার সঙ্গেও কারো সমস্যা ছিলো না। আমি কার বিরুদ্ধে কী বলবো?’ চুয়াডাঙ্গা শহর ফাঁড়ি পুলিশের এসআই রইস উদ্দিন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘আবু হুরায়রার পিতা চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ছেলে নিখোঁজের ব্যাপারে একটি জিডি করেছেন। এ ব্যাপারে থানা থেকে বিশেষভাবে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলেও ঊর্ধ্বতন অনেকেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। আমরা এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ক্লু পাইনি। তবে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কোনো সূত্র পেলেই আমরা এর একটা কূল-কিনারা খুঁজে পাবো বলে বিশ্বাস রাখি। এ ব্যাপারে আমি গ্রামের সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করছি।’