মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরেই চলতে থাকবে। তবে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি ঘন ঘন পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে রোববার রাতে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা। বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়।
অপরদিকে, সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনার টিকা গ্রহণ না করা শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ১২-১৮ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এতে বলা হয়, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রায় সব শিক্ষার্থীর টিকাদান কার্যক্রম শেষ হবে।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অব্যাহতভাবে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বছর শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ৯দিনে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে চার গুণের বেশি। গত ১ জানুয়ারি একদিনে সারা দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৩৭০ জন। অপর দিকে গতকাল সারা দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৪৯১ জন। রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতর এ তথ্য জানিয়েছে। অধিদফতরের তথ্যমতে, ৮ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি সকাল ৮ট পর্যন্ত করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৯১ জন, শনাক্তের হার ছয় দশমিক ৭৮ শতাংশ। তথ্যমতে, নতুন করে যে এক হাজার ৪৯১ জন শনাক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে এক হাজার ১৯৬ জনই ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলার। অর্থাৎ মোট শনাক্তের হার ৮০ দশমিক ২১ শতাংশই ঢাকা জেলার। এছাড়াও খুলনা বিভাগের যশোর জেলায় ২১ জন, খুলনায় তিন জন, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহে দুইজন করে, আর বাগেরহাট ও কুষ্টিয়ায় শনাক্ত হয়েছেন একজন করে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বৈঠকের বিষয়ে জানাতে সোমবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তবে শিক্ষামন্ত্রী রোববার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে করোনার সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যারা বলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তারা শুধু সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করার জন্য করছে; অন্য কিছু না। তারা নানাভাবে গুজব ছড়ায়, সব সময়ই গুজব হয়, গুজবে কান দেবেন না। তবে প্রয়োজনে বন্ধ করা হবে। কিন্তু যতক্ষণ না সেই প্রয়োজন অনুভূত হবে, ততক্ষণ বন্ধ করা হবে না।
করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে রোববার রাতে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে সভা হবে জানিয়ে ওই সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে কী কী অপশন (বিকল্প) আছে তা খুঁজে বের করে, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি বজায় রেখে ও সবাইকে কীভাবে করোনার টিকার আওতায় এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যায়, সে ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে।
শিক্ষামন্ত্রী এও বলেন, ‘তবে এটাও ঠিক, যদি মনে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কারণে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে, তখন হয়তো বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু এখনো যে অবস্থা আছে, আমরাই চাইছি, চেষ্টা করছি কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়। যদি বন্ধ করতে হয় আমরাই বলবো। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাক। কাজেই সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’
করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। তবে সব দিন সব শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে না। সীমিত পরিসরে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
অপরদিকে, গতকাল রোববার মাউশির নির্দেশনায় বলা হয়, ১২-১৮ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর থেকে গত ৩০ ডিসেম্বর বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়। রাষ্ট্রের এ গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাউশির নির্দেশনা অনুসারে, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থী (নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত) ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনে শিক্ষার্থীদের টিকা কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। একই সাথে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় শিক্ষককেও টিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। নির্দেশনা অনুসারে, টিকা গ্রহণ ব্যতীত কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। টিকা কার্যক্রম চলমান অবস্থায় সব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল, জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে ভ্যাকসিনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিতে সচেষ্ট থাকবেন। নির্দেশনা অনুসারে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার সব পরিচালক, সরকারি ও বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, সব অঞ্চলের উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
দামুড়হুদার বাঘাডাঙ্গায় রাস্তার ওপর বাঁশের বেড়া : ১০টি পরিবার অবরুদ্ধ
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ