চুয়াডাঙ্গার বলদিয়ায় ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর আত্মহত্যা নিয়ে ধূম্রজাল
ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে শ্বশুর-শাশুড়ির গা ঢাকা
বেগমপুর প্রতিনিধি: পৃথিবীতে প্রতিটি জীবের কাছে তার জীবন মূল্যবান। সেই জীবনের যন্ত্রণা যখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়; তখন সে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মায়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। যেভাবে পরপারের জীবনে গেলে এ নরক যন্ত্রণা থেকে সে মুক্তি পাবে। তাই কঠিন পরিস্থিতিতে অনেকেই বাধ্য হয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। তাদেরই একজন চুয়াডাঙ্গা বলদিয়া গ্রামের ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ মনিকা খাতুন। শ্বশুর-শাশুড়ির দেয়া অমানুষিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে মনিকাকে হত্যা করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
এদিকে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রাম মনোহরপুরে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বলদিয়া গ্রামের পুরাতনপাড়ার জহুরুল ইসলামের ছেলে ওমর ফারুক ওরফে আশিকের সাথে দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের মমিনের মেয়ে মনিকা খাতুনের। বিয়ের পর থেকেই মোটা অংকের যৌতুক না পাওয়ায় মনিকার শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ, জা’রা প্রায় সময় খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালাতো তার ওপর। নির্যাতন সইতে না পেরে ৬ মাস আগে বাপের বাড়িতেও চলে যায় সে। এ নিয়ে মনিকার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি জিডিও করা হয়। মনিকাকে তার মা-বাবা আর শ্বশুরবাড়িতে পাঠাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু মনিকা জীবনে বিয়ে একবারই হয় এ কথা ভেবে স্বামী আশিকের মুখপানে চেয়ে পুনরায় ফিরে আসে শ্বশুরবাড়িতে।
একটি সূত্র বলেছে, ছ’মাস আগে মনিকা একটি গামলা ভেঙে ফেলে। সেই থেকে উঠতে বসতে গামলা ভাঙা নিয়ে শ্বশুর জহুরুল ও শাশুড়ি নাছিমাসহ পরিবারের সবাই তার দোষত্রুটি ধরতে থাকে। এরই মধ্যে মনিকা ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। আর ২০দিন পর মনিকা প্রথম বারের মতো পুত্রসন্তানের মা হতে চলেছে। আল্ট্রাসনো করে স্বামী আশিক খুশি হলেও বাকি সবাই অখুশি। এ পরিস্থিতিতে মনিকা আত্মহত্যার পথ বেচে নেই। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে মনিকাকে হত্যা করে লাশ ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে নিজগ্রাম মনোহরপুরে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হলেও তার শ্বশুরবাড়ির কোনো লোকজন একনজর দেখতে পর্যন্ত যায়নি।
এ ঘটনায় দর্শনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হলেও রোববার আদালতে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে মনিকার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।