অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ: বাংলাদেশকে ১০৩ রানে হারালো ভারত

মাথাভাঙ্গা মনিটর: অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে গতকাল শারজায় ভারতের কাছে ১০৩ রানের বিশাল ব্যবধানের হারের পর এই সুখ-কল্পনা ছাড়া বাংলাদেশের আর কীই-বা করার আছে! সুখ-কল্পনা আসছে সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের স্মৃতি থেকে। সেবার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ, এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়েই বিশ্বমঞ্চে উদ্যাপন করেছিল আকবর আলীর বাংলাদেশ দল।
এবার জানুয়ারিতে তেমন কিছু হবে কি না, সেটা পরে দেখা যাবে। তবে আপাতত যখন এশিয়া কাপের পারফরম্যান্স আসছে বিবেচনায়, হতাশাই সঙ্গী হচ্ছে বাংলাদেশ দলের। বল হাতে ভারতকে বাগে পেয়েও শেষ পর্যন্ত আটকে দিতে পারেনি, ব্যাটিংয়ে তো নিজেরাই কিছু করতে পারল না। ভারতের ২৪৩ রানের জবাবে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেছে ১৪০ রানে। দুবাইয়ে আগামীকাল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারত মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার। দুবাইয়েই আজ দিনের অন্য সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ২২ রানে হারিয়েছে লঙ্কানরা। মাত্র ১৪৭ রানে শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করেও সেটি পেরোতে পারেনি পাকিস্তান। ভারত বনাম পাকিস্তান ফাইনাল তাই আর হচ্ছে না।
পাকিস্তানের হার নিয়ে অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের ভাবতে বয়েই গেছে! বাংলাদেশই যে হেরে গেছে! বলতে গেলে ভারতের নবম উইকেট জুটির কাছেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। ১৯৩ রানেই অষ্টম উইকেট হারিয়েছিল ভারত, ইনিংসের তখন আর পাঁচ ওভার বাকি।
দুই শ-র নিচেই ভারতকে গুটিয়ে দেবে কি না বাংলাদেশ, এ-ই যখন আলোচনা, তখনই নবম উইকেটে ভারত গড়ে ফেলল ৫ ওভারে ৫০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি! দুইশ তাড়া করা আর ২৫০ তাড়া করা তো এক ব্যাপার নয়। বাংলাদেশকে হয়তো মানসিকভাবেও পিছিয়ে দিয়েছে সেই জুটি। সেটির পেছনে তিনে নামা শেখ রশিদের ৯০ রানের ইনিংসের বড় অবদান তো আছেই, দারুণ দেখিয়েছেন দশে নামা ভিকি অস্তোয়ালও। ৫০ রানের জুটিতে ২৮ রানই অস্তোয়ালের, সেই ২৮ রানও আবার তিনি করেছেন ১৮ বলে ৩ চারে সাজানো ইনিংসে।
অষ্টম উইকেট পড়ার সময়ে রশিদ অপরাজিত ছিলেন ৯৬ বলে ৭৪ রান নিয়ে। অর্থাৎ, নবম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ‘স্বীকৃত’ ব্যাটসম্যান রশিদেরই অবদান ছিল মাত্র ১৬ রান। ‘বোলার’ অস্তোয়ালকেই আটকাতে পারল না বাংলাদেশ।
২৪৪ রানের লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশ শুরুতে ভালো কিছুরই আশা দেখাচ্ছিল। ৫ ওভার শেষেই বিনা উইকেটে ৩১ রান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তাহজিবুল ইসলাম (১৩ বলে ৩ রান) আউট হতেই যেন মড়ক লাগে বাংলাদেশের ইনিংসে।
দলের ৪০ রানে ফিরলেন আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মাহফিজুল ইসলামও, তার ২৩ বলে ২৬ রান বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। সর্বোচ্চ ইনিংস পাঁচে নেমে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া আরিফুল ইসলামের, ৭৭ বলে করেছেন ৪২ রান।
উদ্বোধনী জুটির পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তিন জুটির হিসেবই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্রটা পরিষ্কার করে দেবে। সপ্তম উইকেটে আরিফুলের সঙ্গে আশিকুর জামানের (২৩ বলে ১৫) জুটি হয়েছে ১৯ রানের। অষ্টম উইকেটে আরিফুল ও নাইমুর রহমানের (৬) জুটি ২০ রানের। আর নবম উইকেটে বাংলাদেশ দেখেছে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি—আরিফুলের সঙ্গে অধিনায়ক রাকিবুল হাসানের (৩২ বলে ১৬) জুটিটা হয়েছে ৩৩ রানের! এর বাইরে বাংলাদেশের কোনো জুটিতে দুই অঙ্ক পেরোয়নি।
ভারতের ছয় বোলার হাত ঘুরিয়েছেন, ছয়জনই উইকেট পেয়েছেন। ২টি করে উইকেট চার বোলারের—রাজবর্ধন হাঙ্গারগেকার, রবি কুমার, রাজ বাওয়া ও আগেই ব্যাট হাতে ঝলক দেখানো ভিকি অস্তোয়াল। নিশান্ত সিন্ধু ও কৌশল তাম্বে উইকেট পেয়েছেন একটি করে।
এর আগে বাংলাদেশের বোলারদের শুরুটাও খারাপ হয়নি। অধিনায়ক রাকিবুল হাসান ১০ ওভারে ৪১ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন। একটি করে উইকেট পেয়েছেন আরও চার বোলার।
১৭ ওভারে ৪৯ রানে ভারতের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে পাঠায় বাংলাদেশ। ৬২ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। কিন্তু ততক্ষণে তিনে নামা শেখ রশিদ ক্রিজে গেঁড়ে বসেছেন। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক ইয়াশ ধুলের (২৯ বলে ২৬) সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়েন তিনি। পঞ্চম উইকেটে রাজ বাওয়ার (৪০ বলে ২৩) সঙ্গেও গড়েন ৪৬ রানের জুটি। কিন্তু এরপর আবার নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো ভারত ৪৫ ওভারের শেষ বলে ১৯৩ রানে অষ্টম উইকেট হারায়।
তখন কে ভেবেছিল নবম উইকেটে বাংলাদেশকে এমন যন্ত্রণা দেবে ভারত? শেষ পর্যন্ত সেটিই এমন ব্যবধান গড়ে দেবে, তা-ই বা কে ভেবেছিল?

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More