খুলনায় মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণের অভিযোগ এসআইয়ের বিরুদ্ধে : মিলেছে প্রাথমিক সত্যতা
স্টাফ রিপোর্টার: খুলনায় মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গোয়েন্দা শাখার এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। এছাড়া ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। বরখাস্ত এসআই জাহাঙ্গীর আলম চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে। এদিকে, ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আদালত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তার মেয়ের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ভোরে হোটেল সুন্দরবন থেকে গ্রেফতার করা হয়।
খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তারা হোটেল সুন্দরবন পরিদর্শন করেছেন এবং হোটেলের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। সংশি¬ষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি জানান, প্রত্যক্ষদর্শী ওই নারীর ১১ বছর বয়সী মেয়েকে বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে খালিশপুর জোনের সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, তিনি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন। দুয়েকদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। খুলনা থানার ওসি জানান, আদালতের অনুমতি নিয়ে এসআই জাহাঙ্গীরকে খুমেক হাসপাতালে নেয়া হবে। সেখানে তার শরীরের বিভিন্ন আলামত ও ডিএনএ নেয়া হবে।
হোটেল সুন্দরবনের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা জানান, এসআই জাহাঙ্গীর মাঝেমধ্যে এই হোটেলে আসতেন। গত মঙ্গলবার রাতে তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে মা-মেয়ে যে কক্ষে ছিলেন ওই কক্ষের দরজায় গিয়ে নক করেন। তারা ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়ার পর আমাকে চলে যেতে বলেন। ওইসময় আমি না যেতে চাইলে এসআই জাহাঙ্গীর আমাকে (হোটেল কর্মচারীকে) মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর কক্ষের ভেতরে কী ঘটেছে তা আমি দেখিনি। তবে ওই নারীর চিৎকারে হোটেলের লোকজন নিচতলার মেন গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, ধর্ষণের শিকার নারীকে ওসিসিতে ভর্তির পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরপর তাকে মানসিক কাউন্সিলিং দেয়া হয়। তার শরীর ও পোশাক থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।
খুলনা থানার ওসি হাসান আল মামুন ঘটনা সম্পর্কে বলেন, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার এক নারী তার ২৬ বছর বয়সী ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে ১১ বছরের অসুস্থ মেয়েকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গত মঙ্গলবার বিকেলে খুলনায় যান। চিকিৎসকের সিরিয়াল না পেয়ে রাতে হোটেলে থেকে পরদিন চিকিৎসা সেবা নিয়ে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। রাতে থাকার জন্য তারা নগরীর শহীদ হাদিস পার্কের সামনে হোটেল সুন্দরবনে ওঠেন। হোটেলের ১৩নং কক্ষে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে অবস্থান করেন ওই গৃহবধূ। পৃথক কক্ষে ছিলেন তার ভাগ্নে। রাত ২টা ৫০ মিনিটের দিকে এসআই জাহাঙ্গীর আলম হোটেল বয়কে সাথে নিয়ে ১৩নং কক্ষে যান। সেখানে সঙ্গে থাকা শিশুকন্যা ওই নারীর নয় বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় হোটেল বয়কে ধমক দিয়ে রুম থেকে বের করে দেন এসআই। একইসাথে ওই নারীকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন তিনি। একপর্যায়ে ১১ বছর বয়সী মেয়ের সামনেই ওই নারীকে ধর্ষণ করেন এসআই জাহাঙ্গীর। সে সময় ওই নারী ও মেয়ের চিৎকারে পাশের কক্ষে থাকা ভাগ্নে এবং হোটেলের কর্মচারীরা ছুটে গেলে কক্ষ থেকে বের হয়ে যান তিনি।
এর আগেই খবর পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান হোটেল মালিক মিশারুল ইসলাম মনির। এসআই জাহাঙ্গীর যাতে হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে না পারেন সেজন্য হোটেলের মূল দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর হোটেলের কর্মচারীরা তাকে আটকে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে এসআই জাহাঙ্গীরকে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনার সময় এসআই জাহাঙ্গীর মাদকাসক্ত ছিলো বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ ঘটনায় ভোররাতে মহিলা পুলিশের সহায়তায় ওই নারী খুলনা থানায় গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে এসআই জাহাঙ্গীরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে তিনি খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
এজাহারে জাহাঙ্গীর আলমের বয়স ৪৪ বছর, বর্তমানে কেএমপিতে ডিবি’র এসআই পদে কর্মরত বলে বলা হয়েছে। ঘটনাস্থল খুলনা সদর থানা থেকে ৫০ মিটার দূরে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (জোরপূর্বক ধর্ষণ) অপরাধ।