নির্ভেজাল বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম
হানিফ মন্ডল/ ইয়াছিন জুয়েল: গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির ধারক-বাহক ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলার অতীত ইতিহাস থাকলেও তা এখন হারিয়ে যাচ্ছে অনলাইনের দুনিয়ায়। আবহমানকাল ধরে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার শীতকালীন বিনোদনের অন্যতম খোরাক ছিলো লাঠি খেলাসহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বহু প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা। কালের বিবর্তনে কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের মানুষও আজ ভুলতে বসেছে এ খেলাটি। এক সময় ইউনিয়নের সদাবরি গ্রামের লাঠি খেলার কয়েকটি দল ছিলো। যারা বিভিন্ন এলাকায় লাঠি খেলা দেখিয়ে বিনোদন দিতো সব ধরণের মানুষকে। কিন্তু বর্তমানে লোকবল ও অর্থাভাবে এই খেলার আয়োজন করে না কেউ। যে কারণে নির্ভেজাল এ বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। গ্রামাঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী সব খেলা হারিয়ে যাওয়ায় এ প্রজন্ম ঝুঁকে পড়েছে মোবাইল গেমসের দিকে। ফলে ৪-৫ বছরের শিশু বাচ্চা থেকে শুরু করে যুবক এমনকি মধ্য বয়সীদেরও দেখা যায় মোবাইল গেমসে আসক্তি। ইন্টারনেটের দুনিয়া যেমন মানুষের জন্য সুবিধাজনক, তেমনি অপ-ব্যবহারে চরম ক্ষতির কারণও হচ্ছে। ঢাক-ঢোল, কাসি ও লাঠির তালেতালে নাচা-নাচি, অন্য দিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টানটান উত্তেজনার একটি খেলার নামই ছিলো লাঠি খেলা। খেলা শুরু হলে ঢাক-ঢোল ও কাসির ঘণ্টার ঝনঝনানি শব্দে চারপাশে যেনো উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হতো। এ বাদ্যের তালেতালে নেচে নেচে লাঠির মাধ্যমে অঙ্গ-ভঙ্গি প্রদর্শন করতে দেখা যেতো লাঠিয়ালদের। খেলোয়াড়রা একে-অপরের সঙ্গে লাঠি যুদ্ধে লিপ্ত হতো। খেলা দেখে চিত্তের বিকাশ ঘটতো দর্শকদের মধ্যে। করতালির মাধ্যমে খেলোয়াড়দের উৎসাহ যোগাতো দর্শকরা। এক সময়ের লাঠি খেলার অন্যতম বিচক্ষণ খেলোয়াড় শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, আমাদের সময় কয়েকটি দল ছিলো, যে দলগুলো খুব সুন্দরভাবে বিভিন্ন এলাকায় খেলা করে দর্শকের মনে আনন্দ দিয়ে আসতো। কিন্তু আমাদের দলের সেই মানুষগুলো এখন একই স্থানে নেই। যে যার পেটের তাগিতে সংসারের হাল ধরে রয়েছে নানা স্থানে। উৎসাহী যুবকেরা এ খেলায় অংশ নিলে ফিরে পাবে জৌলুস। সদাবরির লাঠিখেলা দলের ওস্তাদ খোকন মিয়া বলেন, সখের বসে লাঠি খেলা খেলতাম। তাই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আজও লাঠি খেলাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রবীনদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বলেছেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা আজ বিলুপ্ত প্রায়। এক সময় এ খেলা ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে হওয়ায় যেন মেলায় পরিণত হতো। যতই দিন যাচ্ছে, ততই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহি লাঠি খেলা সহ গ্রাম বাংলার বহু খেলা-ধুলা। ঐতিহ্যবাহি ওই সব খেলা-ধূলা টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষক। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও উৎসাহ পেলে হয়তো আবারো প্রাণ ফিরে পেতে পারে সেসব খেলাধুলা। এতে একদিকে যেমন বিনোদন পাবে গ্রামাঞ্চলের মানুষ, অন্যদিকে বর্তমান প্রজন্ম ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে মোবাইল গেমস থেকে।