ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে থামছে না সহিংসতা : বাড়ছে আতঙ্ক
জীবননগরের সীমান্ত ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মারামারীতে আহত ১২
স্টাফ রিপোর্টার: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা চলছেই। প্রতিদিনই ঘটছে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা। প্রচার-প্রচারণা, নির্বাচনী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করেই এসব ঘটনা ঘটছে। এতে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে রয়েছে আতঙ্ক। গতকাল সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারিতে উভয়পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছে।
এদিকে, দামুড়হুদার চার ইউনিয়নে গত কয়েক দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চললেও এরই মধ্যে কয়েকটি ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়েছে এলাকায়৷ ভোটারদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে ভোটাররা। দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর অভিযোগে জানা যায়, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে নির্বাচনী এলাকা বদনপুরে (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজি আব্দুল কাদিরের মোটরসাইকেল প্রতীকের অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও পোস্টার ছেড়া হয়। পরদিন সকালে শনিবারে প্রার্থী নির্বাচনী রিটানিং কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর দুদিন পর রোববার সকালে একই ইউপি নির্বাচনের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (জামায়াত নেতা) বর্তমান চেয়ারম্যান শরিফুল আলম মিল্টনকে দেউলী মোড়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার সময় লাঞ্ছিত করা হয়। ওইদিনই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এই পৃথক দুটি ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়েছে নির্বাচনী এলাকায়। গত কয়েকদিনের নির্বাচনী এলাকার চিত্র পাল্টে গেছে দুদিনের দুটি ঘটনায়।
জানা গেছে, জীবননগর সীমান্ত ইউনিয়নে চার নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী আব্দুল আলিম (মোরক মার্কা) এবং একই ওয়ার্ডের অপর প্রার্থী ইসরাইল বিশ্বাসের (টিউবওয়েল মার্কা) কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ভোট চাওয়াকে কেন্দ্র করে বাগবিত-া হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে প্রার্থী ইসরাইল বিশ্বাসসহ দুইপক্ষের মোট ১২ জন আহত হয়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর সীমান্ত ইউনিয়নের মেদিনীপুর গ্রামের তেতুলতলা নামকস্থানে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জীবননগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। আহতরা জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিতসা নিয়েছেন। এরমধ্যে একজনের অবস্থা অবনতি হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সীমান্ত ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই মেম্বর প্রার্থী ইসরাইল বিশ্বাসের সমর্থক এবং বর্তমান ৪ নাম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আলীমের সমর্থকের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।
আব্দুল আলীমের পক্ষের আহতরা হলেন সীমান্ত ইউনিয়নের মেদিনীপুর গ্রামের মৃত হারান মোল্লার ছেলে তারিক মোল্লা (৩৫), তারই ভাই আব্দুর রাজ্জাক (৫০), একই গ্রামের মৃত দাউদ ম-লের ছেলে শওকত ম-ল (৪৫), আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল হালিম (২৫), মৃত কবিল ম-লের ছেলে নওশের ম-ল (৫০)। অপর প্রার্থী ইসরাইল বিশ্বাসের পক্ষের আহতরা হলেন, মেদিনীপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন বেল্টুর ছেলে সুমন (৩৫), একই গ্রামের তবিকুর রহমানের ছেলে তারিখ (৪০), ফকরুদ্দিনের ছেলে শান্ত (৩৬), দরুদ চৌধুরীর ছেলে কাওছার চৌধুরি (৫০) মৃত আইজেল তরফদারের ছেলে কাওছার আলী (৫০) ও তার ভাই নওশেদ আলী (৪২)।
প্রার্থী আব্দুল আলীম বলেন, সন্ধার পর আমার কর্মীরা ভোট চাওয়ার জন্য মেদিনীপুর গ্রামের তেতুলতলা নামকস্থানে পৌঁছুলে ইসরাইল বিশ্বাসের কর্মীরা বাধা দেন। এই নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে কথাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা আমার পাচজন কর্মীকে বাঁশ, রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। তাদেরকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক নেয়া হয়। এর মধ্যে তারিখের অবস্থা অবনতি হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিতসক। এ বিষয়ে আমি জীবননগর থানা পুলিশে একটি অভিযোগ দিয়েছি।
প্রার্থী ইসরাইল বিশ্বাস বলেন, আমি ঘটনার সময় ছিলাম না। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। পরে আমি আসলে আব্দুল আলীমের সমর্থকরা আমাকে মারধর করে এবং আমার গায়ের জামা কাপড় ছিড়ে দেয়। এতে আমিসহ মোট সাতজন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিতসা নিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাকিল আর সালান বলেন, সোমবার দিনগত রাত পৌনে ১ টার দিকে তারিখ নামে একজনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। তার হাতের একটি আঙুল ভেঙ্গে হাত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে এটা রড বা লোহা জাতীয় কিছুর আঘাত লেগেছে। প্রাথমিক চিকিতসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে জীবননগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর মধ্যে এক প্রার্থীর সমর্থকরা ভোট চাইতে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত দেখা দেয়। এতে সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটলেও কেউ আহত হয়নি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তিনি আরও বলেন, দুই প্রার্থী মিলে নিজেরা বিষয়টি মীমাংসা করে নিয়েছে।