কুষ্টিয়ায় যৌতুকলোভী ঘাতক স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে স্ত্রী হত্যা মামলায় যৌতুকলোভী ঘাতক স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক তাজুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে আসামী আজিজুল হকের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত হলেন কুমারখালী উপজেলার চরবানিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আফজাল হোসেনের ছেলে আজিজুল হক (৩০)। আদালত যাবজ্জীবন কারাদ-সহ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন।
আদালতের মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল রাত ১২টায় কুমারখালী উপজেলার চরবানিয়াপড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে আজিজুল হক তার স্ত্রী কলেজ ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা জেসমিনকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন শেষে শ^াসরোধে হত্যা করেন। পরদিন সকালে সংবাদ পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে কুমারখালী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত জেসমিনের পিতা রওশন আলী বাদি হয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে একটি নালিশী মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন কর্তৃক তদন্তভার ন্যাস্ত করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে যৌতুক নির্যাতনে স্ত্রী জেসমিন হত্যা দায়ে স্বামী আজিজুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পিবিআই।
মামলার বাদি নিহত জেসমিনের পিতা রওশন আলী মালিথার অভিযোগ, প্রতিবেশী স্বামী আজিজুল স্ত্রী জেসমিনকে কলেজে যাওয়া আসার পথে নানাভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতো। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক ও শারীরিক সম্পর্ক তৈরী করতে বাধ্য করে এবং জেসমিনকে গোপনে বিয়ে করে। ঘটনাটি পারিবারিকভাবে জানাজানি হওয়ার পর দুই পরিবার সামাজিকভাবে তা মেনে নেয়। কিন্তু বিয়ের পর মাত্র দুই মাস পার হতে না হতেই আজিজুল তার আসল পরিচয়ের মুখোশ খুলে স্ত্রী জেনমিনের পিতা মাতার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। জেসমিনের পিতা একই গ্রামের বাসিন্দা রওশন আলী মালিথা কন্যার সুখ শান্তির কথা ভেবে ১লাখ টাকা আজিজুলের হাতে তুলে দেয় এবং বাকী টাকার জন্য সময় চেয়ে নেন। আজিজুলের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে বাকী দুই লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় জেসমিনের ওপর নির্যাতন শুরু করেন আজিজুল। ঘটনার দিনও একইভাবে নির্যাতনে জেসমিনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করায় জ্ঞানশুন্য হয়ে যান। এসময় শ^াসরোধ করে জেসমিনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন আজিজুল। পাষন্ড আজিজুল প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার মাত্র ৫ মাসের মধ্যেই জেসমিনকে হত্যা করে। অথচ এই হত্যা মামলাটির ন্যায় বিচার পেতে আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। ঘটনার সময় পুলিশ লাশ উদ্ধারকালে সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেছিলো জেসমিন আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের চাপে এবং কুমারখালী থানা পুলিশের আসামির পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তখনই বুঝেছিলাম আমি আমার মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। সে কারণে সঠিক তদন্ত ও ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চরম মানসিক যন্ত্রনা ও হতাশার মধ্যে বিজ্ঞ আদালত আজ যে রায় দিলেন আমি তাতে খুশি হয়েছি।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী জানান, গৃহবধূ জেসমিন হত্যায় আদালতে করা নালিশী মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে দীর্ঘ স্বাক্ষ্য শুনানী শেষে আসামির বিরুদ্ধে আনিত স্ত্রী হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আসামি আজিজুল হকের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশসহ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও একবছর সাজা ভোগ করতে হবে। তবে গৃহবধূ জেসমিন হত্যাকা-ের ঘটনায় দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মধ্যদিয়েই বিজ্ঞ আদালত আজ যে রায় দিয়েছেন তাতে বাদি ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More