স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে তারা বলেছে- বিএনপি করছে, বিএনপি করেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর মামলাও দিয়েছে। এখন সব জাতীয় পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘর পোড়ানোর ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে সৈকত নামের একজন ছাত্রলীগ নেতা। পরে তারা মানুষকে বোকা বানানোর জন্য দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে। সেটাও ঘটনা ঘটার পরে। তিনি বলেন, একই ঘটনা ঘটেছে চৌমুহনী ও কুমিল্লায়। এই মিথ্যাচার, এই নাটক লোকে বুঝে। আমাদের বলার দরকার নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা চিৎকার করে বলছে এ ঘটনার জন্য দায়ী সরকার। ইকবালকে গ্রেফতার করে নাটক করা হচ্ছে। এসব নাটক মিথ্যাচার দেশের মানুষ জেনে গেছে। সুনামগঞ্জ সাবেক হুইপ ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আসপিয়া স্মরণে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত শোকসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। গতকাল রোববার বিকেলে শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ওই শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেছে। কারণ আমরা চাল-ডাল-তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলছি, মানুষের নিরাপত্তার কথা বলছি, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের কথা বলছি, এখন থেকে জনগণের দৃষ্টিকে সরিয়ে নিয়ে নতুন করে সাম্প্রদায়িকতার কাজ শুরু করার জন্য, একটা ফ্যাসাদ তৈরি করার জন্য। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি না। এখানে আমরা হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম খ্রিস্টান একই বাগানের ফুলের মতো বেড়ে উঠেছি। তারা হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা এসব করছে। কারণ সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে। মিথ্যাচার করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তিনি আরও বলেন, আমরা মর্মান্তিক করুণ যন্ত্রণার মধ্যে বসবাস করছি। আমাদের সন্তানরা ঘরের বাহিরে গেলে ফেরত আসবে কিনা এ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বিনা অপরাধে নিরীহ মা-বোনদের তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশে এক চরম অরাজক অবস্থা চলছে। বিএনপির ৫ শতাধিক নেতাকর্মীরা গুম হয়েছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া। দেশের সম্পদ লুট করে দেশের বাহিরে নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে ক্ষমতায় আসার পর তারাই দেশকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। গণতন্ত্রের কথা বলে তারা জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা সরকার গঠনের আগে বলেছিল ১০ টাকায় চাল, কম দামে তেল, ডাল খাওয়াবে। ঘরে ঘরে চাকরি দিবে। এখন ২৫ লাখ টাকার নিচে কোনো চাকরি মিলে না। চাকরি পেতে হলে আওয়ামী লীগের সার্টিফিকেট লাগে। তিনি বলেন, বিচারালয়কে চরমভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা আদালতে জামিন পায় না। এ দেশে সাধারণ মানুষ কোনো বিচার পায় না। এটাই বাস্তবতা। সমস্ত রাষ্ট্রকে দলীয়করণ করা হয়েছে। মানুষ পুলিশ দেখলে পালায়। মানুষ এখন বলে মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের ওপর খড়গ নেমে এসেছে। গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। সব সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। এই দেশ আওয়ামী লীগ চালায় না। এই দেশ চালায় অদৃশ্য সরকার। অন্ধকার থেকে এই শক্তি কলকাঠি নাড়ে। সরকারের লোকজন প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলে। ওবায়দুল কাদের প্রতিদিন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। সরকারের তথ্যমন্ত্রীর মিথ্যাচারে জনগণ তাকে ঠাট্টা করে ‘হাসা মাহমুদ’ বলে। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম নুরুলের সঞ্চালনায় শোকসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক, খন্দকার আব্দুল আব্দুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন জীবন, সিলেট সিটি করপোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জের সাবেক সাংসদ নজির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, প্রয়াত ফজলুল হক আসপিয়ার পুত্র ব্যারিস্টার আবিদুল হক। এছাড়া বক্তব্য রাখেন- সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাদের আহমদ, অ্যাডভোকেট শেরেনুর আহমেদ, আকবর আলী, আনসার উদ্দিন, আনিসুল হক, যুগ্ম সম্পাদক মুনাজ্জির হোসেন সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুলসহ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। শোকসভায় ৩৫ জন বক্তা তাদের বক্তব্যে প্রয়াত রাজনৈতিক নেতা ফজলুল হক আসপিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, বর্তমান দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার মতো বিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বড়ই প্রয়োজন ছিল। ফজলুল হক আসপিয়া যে রকম বাংলাদেশ দেখে যেতে চেয়েছিলেন এ সরকারের পতন ঘটিয়ে এ দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে তার সেই স্বপ্ন পূরণ করা হবে ইনশাআল্লাহ। শোকসভা উপলক্ষে জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠে অনুষ্ঠান স্থল। মির্জা ফখরুলের আগমনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। উল্লেখ্য, সাবেক হুইপ ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আসপিয়া গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ