সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার চেয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লা, রংপুর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পূজাম-পে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলের শত শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমের ভক্তরা। এ সময় সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিতের দাবিসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আর কোথাও এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা-ভাঙচুর বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে আন্দোলনকারীরাই তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। টানা পৌনে চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাজধানীর পল্টন, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাংলা মোটর, ফার্মগেট ও টিএসসিমুখী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। অনেকে হেঁটে ও ঘোরাপথে রিকশায় গন্তব্যে পৌঁছান। দুপুর ২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ মোড় ত্যাগ করলে ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাবির জগন্নাথ হলসহ অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে ঢাবির শিক্ষকরাও যোগ দেন। আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাবির জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা, সাবেক প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার ও আইন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র ম-ল। দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেয় ইসকন বাংলাদেশ। কর্মসূচির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘৪৬-এর চেতনায়, বাংলাদেশ চলবে না’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘আমার ভাইয়ের খুনি কে, ফাঁসি দাও দিতে হবে’, ‘জঙ্গিবাদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই। সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান সবাই।
আন্দোলনের সমন্বয়ক জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব দত্ত জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের দাবি মেনে না নেন তাহলে আবার আন্দোলনে যাবো। আর এর মধ্যে যদি আবার কোনো মন্দিরে হামলা চালানো হয় তা হলে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেব। জয়দেব দত্ত আরো বলেন, আশা করেছিলাম আমাদের সাত দফা দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে কোনো একটা আশ্বাস আসবে। কিন্তু সে রকম কোনো আশ্বাস আমরা পাইনি। ইসকন বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
এ সময় তিনি সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার মন্দিরগুলোর সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকা- ও লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, জাতীয় সংসদে আইন করে মন্দির ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হবে, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন করতে হবে, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আধুনিকায়ন করে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে এবং জাতীয় বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে।
চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। কর্মসূচিতে দোষীদের বিশেষ দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনাসহ পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় শহরের শহীদ হাসান চত্বরে ওই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চুয়াডাঙ্গা শাখা। এসময় উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চুয়াডাঙ্গা শাখার আহ্বায়ক অকুল চৈতন্য দাস অধিকারী, পরিচালক শচী প্রাণধন নিমাই দাস ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চুয়াডাঙ্গা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক প্রশান্ত অধিকারীসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিগত সপ্তাহজুড়ে নোয়াখালী ইসকন মন্দির, কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মন্দিরের পূজা ম-প, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে। হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর থেকে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এ ধরণের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে ইসকন মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভক্তদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
পূর্ববর্তী পোস্ট
প্রেমিকের কাছে প্রতারিত হয়ে ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ