চাঁদপুরে নিহত ৪ : বিভিন্ন স্থানে ৫৭ জন আটক : ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন
স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লায় পূজাম-পে কুরআন অবমাননার অভিযোগে বিভিন্ন স্থানে হামলা-সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে চারটি মামলা করেছে। আটক করা হয়েছে ৫৭ জনকে- এর মধ্যে কুমিল্লায় ৪১ জন, কক্সবাজারে ৯ জন ও চাঁদপুরে ৭ জন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পূজার নিরাপত্তায় ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরও অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। ২২ জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি মোতায়েনসহ আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সরকার ঘোষণা দিয়েছে, দুষ্কৃতকারীদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে বুধবার রাতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হামলা, সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের লাশ চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাতজনকে আটক করা হয়েছে। হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ জানান, নিহত ব্যক্তিরা হলেন হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের আল আমিন (১৮), রান্ধুনীমুড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে ইয়াছিন হোসেন (১৫), একই এলাকার আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামীম (১৯) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাবলু (৩০)।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কাউকে উদ্দেশ্য করে গুলি করিনি। মন্দিরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের ওপর হামলা চালানো হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৩৯ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় এএসপি সোহেল মাহমুদ, হাজীগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদসহ ২৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। এর মধ্যে পুলিশের আটজন সদস্য হাজীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার রাত সোয়া ৮টায় হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে লক্ষ্মীনারায়ণ আখড়ায় ঢিল ছোড়া হয়। এক পর্যায়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে চারজন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হামলার ঘটনার পর রাত ১১টা থেকে হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। সেখানে (হাজীগঞ্জে) পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ২ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে শহরের শহীদ হাসান চত্বরে পবিত্রগ্রন্থ আল কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে জেলা ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি জুনাইদ আল হাবিবি, সাধারণ সম্পাদক মুফতি মুস্তাফা কামাল কাশেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাফিজুর রহমান, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সামাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, কুমিল্লার ঘটনা ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাদের শাস্তি না হলে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কোরআনকে অবমাননা করার মতো অপরাধ করেই যাবে। আইন সকলের জন্য সমান। তাই অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দিতে হবে কঠোর শাস্তি।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, কুমিল্লার নানুয়া দিঘীরপাড় নামক স্থানের একটি পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার প্রতিবাদে জীবননগরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উলামা পরিষদের ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সামবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলিম অংশগ্রহণ করেন এবং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপনসহ দায়ী ব্যাক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। গতকাল আসর নামাজ বাদ বাসস্ট্যান্ডের মুক্ত মঞ্চ হতে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। পুলিশি কঠোর প্রহরার মধ্যে মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। শেষে বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা উলামা পরিষদের সভাপতি মাও. মাহবুবুর রহমান গওহরীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ হতে অনতিবিলম্বে এ ঘটনার সাথে জড়িত দায়ীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন উলামা পরিষদের নেতা মাও. আব্দুল ওদুদ, মাও. সাজেদুর রহমান, মাও. সাইফুল্লাহ, মুফতী শাহজামাল, মাও. জুবায়ের আল মাহমুদ, হাফেজ মিজানুর রহমান ও মুফতি মঞ্জুরুল কাদির। এর পূর্বে জীবননগর থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেক সামবেশে দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য রাখেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
আলমডাঙ্গার খেজুরতলায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অনশন ঘটনায় থানায় অভিযোগ
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ