চুয়াডাঙ্গার গহেরপুরের প্রবাস ফেরত ইনামুলের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
গড়াইটুপি প্রতিনিধি: নিজের কর্ম ও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রবাসীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখে। আর এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সাথে চরম প্রতারণা ও টাকা আত্মসাত করেছেন এক প্রতারক।
একজন কাজের সর্দারের ফাঁদে পড়ে প্রবাসীরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গহেরপুরের ৫ জনসহ বিভিন্ন জেলার সর্বমোট ১৮ জন প্রবাসীরা। এছাড়াও অনেকে তার ফাঁদে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কষ্টার্জিত ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে সকলের অগোচরে দেশে ফিরেছেন ওই প্রতারক। এছাড়াও নাম না জানা অনেকের কাছ থেকে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা ওয়ার্ক বিল উঠিয়ে নিয়ে বিদেশ থেকে চম্পট দেন বলেও অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও বাড়ী এসে সোনার গয়না, বিলাসিতার জিনিস, দেশে নতুন বাড়ির কাজ শুরু, বিলাসবহুল গাড়িসহ নানা শখ পূরণের নেপথ্যে রয়েছে লেবারদের টাকা আত্মসাতের টাকা। বলা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দর্শনা থানার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে ইনামুল হক সুমনকে নিয়ে। তিনি মালয়েশিয়া লেবারদের সরদার হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তার আন্ডারে অনেক বাঙালী কাজ করতেন। যার মধ্যে রয়েছেন তার নিজ গ্রাম গহেরপুরের মান্দার জোয়ার্দ্দারের ছেলে ছাত্তার জোয়ার্দ্দার, মৃত আবুল ম-লের ছেলে আফু ম-ল, মৃত নিয়াজ হোসেনের ছেলে এনামুল হক, মৃত মাহাতাব শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন গড়াইটুপি গ্রামের ফারুক হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার জাহাঙ্গীর হোসেন, ঝিনাইদহ জেলার কাশিপুর গ্রামের সজিব হোসেন, কুমিল্লার জব্বার, যশোরের আইনাল ও টিটু, পাবনার আনোয়ার, বগুড়ার কায়েম, আজমল, সৌরভ এবং সাতক্ষীরার আজিজুল ও আবুজানসহ অজ্ঞাত আরো অনেকে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা স্থানীয় তিতুদহ ক্যাম্প ও গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তারা বলেন, গহেরপুর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে ইনামুল হক সুমনের অধীনে তারা লেবার হিসেবে কাজ করতেন। তাদের সরদার হিসেবে অভিযুক্ত ইনামুল হক সুমন দায়িত্ব পালন করতেন। তারা মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যে একটি প্রজেক্টে কাজ করতেন। প্রজেক্ট মালিকের সাথে সরদার হিসেবে সকলের হাজিরার টাকা তিনি তুলতেন। তার স্বাক্ষর ছাড়া টাকা উঠতো না। একটি প্রজেক্টের কাজ চলাকালীন খেয়ে না খেয়ে লেবাররা কাজ করতেন। এমনকি অনেকের বাড়ি থেকে খাবারের টাকা পাঠাতে হতো। ওই প্রজেক্টের কাজ শেষ করিয়ে নিয়ে তিনি তাদের অন্য একটি প্রজেক্টে কাজে লাগায়। কিন্তু ফিল আপ বা কাজ শেষ হওয়ার টাকা চাইলে অভিযুক্ত ইনামুল সুমন নানা টালবাহানা শুরু করেন। মালিক দেইনি বা দিচ্ছে না বলে জানান। ভুক্তভোগীরা যেহেতু বৈধভাবে মালেশিয়া আছেন তারা আইনের আশ্রয় নিতে গেলে ইনামুল বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে লেবারদের হাজিরার টাকা তুলে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশে চলে আসেন ইনামুল।
এই ঘটনার পরে বিষয়টি জানাজানি হলে টাকার বিষয় অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ইনামুল সুমন। উপায়ান্তর না পেয়ে স্থানীয় তিতুদহ ক্যাম্পে ও গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদে ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ইনামুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এদিকে মহামারী করোনার মধ্যে নিজেরা ও পরিবার পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগীরা। খেয়ে না খেয়ে প্রবাসে দিন কাটছে তাদের।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে নজরুল ইসলাম নামের একজন বিদেশ থেকে মোবাইলে জানান, আমরা করোনার মধ্যে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছি। কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে দিনতিপাত করছি। তার মধ্যে আবার আমাদের সাথে ধোঁকাবাজি করেছে আমার গ্রামের ইনামুল হক সুমন নামের এক প্রতারক। আমাদের সর্বনাশ করেছে সে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের রোজগারের টাকা সে আত্মসাত করেছে। আমরা টাকা ফেরত পেতে সকলের সহযোগিতা চাই। প্রতিটি ওয়ার্কসিটে বা হাজিরা বিলে ইনামুল স্বাক্ষর করে টাকা তুলেছে। প্রমাণ হিসেবে ছবি তোলা আছে। সেই টাকা আমাদের না দিয়ে একা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন। আমাদের সাথে চরম প্রতারণা করা হয়েছে। আমি তার শাস্তি চাই। টাকা ফেরত না পেলে প্রয়োজনে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।
এ বিষয়ে তিতুদহ ক্যাম্প ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন এবং অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার বিকালে বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পে বসলে ইনামুল বিদেশ যাবে বলে মৌখিকভাবে জানান। এছাড়াও বিষয়টি গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূক্তভোগীরা। আগামী মঙ্গলবার এ বিষয়ে গ্রাম আদালত বসবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, আমি চাই গ্রামে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থেকে দুপক্ষ সুষ্ঠু সমাধানে উপনীত হোক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইনামুল হক সুমনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।