যাদের নেই নুন্যতম কাগজপত্র : যত দোষ মোটরসাইকেলের
নজরুল ইসলাম : জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষকে প্রতিনিয়ত কর্মব্যস্ত থাকতে হয়। কখনো শহর থেকে গ্রামে, কখনো গ্রাম থেকে শহরে। আবার কখনো বা বসবাসরত স্থানের নানা পথ ধরে এদিক-ওদিক মানুষকে ছুটতেই হয়। কেউ আবার পথকেই সঙ্গী করে নিয়েছে। কিন্তু পথ মানুষকে কতটুকু সঙ্গী করতে পেরেছে? প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পথের বলি হচ্ছে। কত মানুষের জীবন যন্ত্রদানবের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে তার কোনো হিসেব নেই। মোটকথা সড়ক দুর্ঘটনা অহরহ ঘটেই চলেছে। যেসব তিন চাকা বা চার চাকার অবৈধ যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে তাদের রাস্তায় চলার কোনো বৈধ কাগজপত্রই নেই। অথচ সেসব যানবাহনের দখলে শহর কিংবা গ্রামীণ সড়ক। মোটরসাইকেল চালকদের আক্ষেপ যত দোষ মোটরসাইকেলের। এ বাহনকে অপরাধী বাহন হিসাবে দেখা হয়। আর আইনের আওায় পড়ে দ-মাসুল গুনতে হয়।
সড়ক দুর্ঘটনা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা ও টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলেই দেখা যায় অসংখ্য মানুষ নানাভাবে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন শহরে ও সড়ক-মহাসড়কে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। ফলে অকালে ও অকস্মাৎ মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব হচ্ছে এদেশের নিরীহ যাত্রী ও পথচারী। দুর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই গাড়ির চালক পালিয়ে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী সড়ক, দুর্ঘটনায় প্রতিবছর বাংলাদেশে কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। পঙ্গুত্ব হচ্ছে কমপক্ষে দশ হাজার মানুষ। আর দুর্ঘটনাস্থলে আহত হয় বিশ থেকে ত্রিশ হাজার মানুষ। দুর্ঘটনা বেশিরভাগই মহাসড়কগুলাতে ঘটে থাকে। তারই ধারবাহিকতায় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও দূরপাল্লার যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সড়কে নসিমন, করিমন, লাটাহাম্বার, আলমসাধু, পাউয়ারট্রিলার, পাখিভ্যান, ইজিবাইকসহ তিন বা চার চাকার লাইসেন্সবিহীন অবৈধ এসব যানবাহন চলাচল করছে। যাদের নুন্যতম কোনো কাগজপত্র নেই তাদের দখলেই রাস্তা বা সড়কগুলো। এসব যানবাহনের সংখ্যা কত তার কোনো হিসাব নেই কারো কাছে। বিশেষ করে গ্রামীণ সড়কের সর্বনাশ করছে ট্রাক্টর, মাহিন্দ্র নামক অবৈধ যানবাহন। গ্রামীণ সড়কসহ জনবহুল বিভিন্ন সড়কে অবাধে চলছে এসব অবৈধ যান। অথচ ফিটনেসবিহীন বেপরোয়া গতিস¤পূর্ণ এ সব যানের নেই কোনো লাইসেন্স। গাড়ির চালকরাও রয়েছে অল্পবয়সী ও আনাড়ি। তাদেরও নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স। সড়কের সর্বনাশ করে বলে স্থানীয়ভাবে পরিচিত সাধারণ মানুষ এ সব যানের নাম দিয়েছেন সড়কের যম। স্থানীয় প্রশাসন এসব যানের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে ব্যবস্থা নিলেও কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না বেপরোয়া গতির অবৈধ এসব যান চলাচল। এ কারণে এ সকল অবৈধ যান চলাচল বন্ধ না হওয়ায় একদিকে সড়কের হচ্ছে সর্বনাশ, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জনজীবন। তাছাড়াও এসব যানের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। মোটরসাইকেল চালক জামাত আলী, সুজাহান, বসির, তোজাম্মেল, শফিকুল আক্ষেপ করে বলেন, যত দোষ মোটরসাইকেলের। মোটরসাইকেল নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে ধরা খেলে মোটরসাইকেলসহ চালকের বিরুদ্ধে নানা আইন প্রয়োগ হয়ে থাকে। মোটরসাইকেলের কিছু কাগজ তো থাকেই। আর যেসব অবৈধ যানবাহন রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের কোনো কগজই নেই। মোটরসাইকেলকে অপরাধী বাহন হিসাবে দেখা হয়।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, মানুষ বাড়ার সাথে সাথে সবকিছুই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। তবে এসব যানবাহনের ব্যাপারে সরকার ভাবছে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ব্যাক্তিগত মতামত অবৈধ যান চলাচল আমি চাই না। মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন হোক এটাই আমি চাই। এর জন্য শুধু পুলিশ নয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, মালিকপক্ষ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারেরও নির্দেশ অবৈধ যানবাহন হাইওয়ে সড়কে চলতে পারবে না। চুয়াডাঙ্গা জেলাই তো হাইওয়ে সড়ক নেই, আছে আঞ্চলিক মহাসড়ক। তারপরও বিষয়টি দেখা হবে।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ