জীবননগর ব্যুরো: দুই জেলার বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের কারণে গত ৮ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে চুয়াডাঙ্গা-যশোর-খুলনা রুটে সরাসরি বাস চলাচল। উভয় জেলার বাস মালিক সমিতি এটাকে তাদের নেতৃত্ব ও মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছেন। ফলে নিরসন হচ্ছে না দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। যার বলি হয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এ রুটে চলাচলকারী হাজার-হাজার বাসযাত্রী। কবে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ বাস মালিক সমিতির ১৬টি ট্রিপ সরাসরি চুয়াডাঙ্গা হয়ে আলমডাঙ্গা চলাচল করার কথা। রুট থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি কালীগঞ্জ বাস মিনিবাস মালিক সমিতির ১৬টি বাস চলাচল করতে দিচ্ছে না। ফলে উভয় মালিক সমিতির বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং চুয়াডাঙ্গা বাস মালিক সমিতির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ বাস মিনিবাস মালিক সমিতি সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। যার ফলে চুয়াডাঙ্গা বাস মালিক সমিতি ও কালীগঞ্জ বাস মালিক সমিতি তাদের বাসগুলো জেলার সীমান্ত জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ বাজার পর্যন্ত চলাচল করছে। এর ফলে বাস পরিবর্তন করতে যেয়ে এবং পরিবহন শ্রমিকদের টানাটানিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বাসযাত্রীরা।
স¤্রাট আটোর স্বত্বাধিকারী ফখরুল কবির বলেন, এ অঞ্চলের মোটর পার্টসসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের বড় মোকাম যশোর। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, দর্শনা, দামুড়হুদা ও জীবননগর এলাকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী যশোর থেকে মালামাল কিনে থাকে। এছাড়াও এ অঞ্চলের অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসায়িক ও চিকিৎসা কাজে যশোর-খুলনা রুটে চলাচল করে থাকে; কিন্তু দীর্ঘ ৮ মাস ধরে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় মালামাল পরিবহনসহ যাত্রীদের যাতায়াত করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে । দুই ঘন্টার রাস্তায় গাড়ি থেকে নামা-ওঠা করাকালে যাত্রীরা তাদের ব্যাগ-ব্যাগেজ খোয়াচ্ছেন। সেই সাথে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
কালীগঞ্জ বাস মিনিবাস মালিক সমিতির অভিযোগ, তাদের ২৬টি ট্রিপ বাস যশোর-কালীগঞ্জ ভায়া জীবননগর হয়ে চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে আলমডাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করার কথা। উভয় সমিতির মধ্যে এমন চুক্তি থাকলেও চুয়াডাঙ্গা বাস মালিক সমিতি তা কার্যকর করেনি। দীর্ঘদিন ৬ বছর পর তারা ২৬টি ট্রিপের স্থলে ১৬টি ট্রিপ দিতে রাজি হলে আমরা তা মেনে নেয়; কিন্তু এ সিদ্ধান্তও চুয়াডাঙ্গা মালিক সমিতি বাস্তবায়ন না করায় বর্তমান এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কালীগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি হাজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, কোনো সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত মানতে চায়না চুয়াডাঙ্গা বাস মালিক সমিতি। তারা তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আমাদের ১৬টি ট্রিপ দিলে সরাসরি বাস চালাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
চুয়াডাঙ্গা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একে মঈনুদ্দিন মুুক্তা সাংবাদিকদের জানান, কালীগঞ্জ বাস মালিক সমিতির আলমডাঙ্গা রুটে ২৬ ট্রিপের যে কথা বলছেন সেটা অনেক আগের ঘটনা। সে সময় তারা লোকাল ট্রিপে বাস চালাতেন। পরবর্তীতে ওই রুটে মেইল বাস সার্ভিস চালু করা হয়। সে কারণে সকলের সুবিধামত হিসেব করে তাদের ১৬ ট্রিপ দেয়া হয়; কিন্তু তারা তাদের পূর্বের দাবিতে অনড় রয়েছে। ফলে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিরসন করতে জীবননগর পৌরমেয়র আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় দুইজন সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ আসনে সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে এ সমস্যার সমাধানের বৈঠক বসবে। সেখানেই এ সমস্যার নিরসন করা হবে বলে আশা করছি।
জীবননগর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম জানান, এলাকার মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে উভয়পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার তিন জন সংসদ সদস্যর সাথে যোগাযোগ করেছি। লগডাউন কাটলেই বসে নিরসন করা হবে।