চুয়াডাঙ্গায় নোভেল করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সদর উপজেলা ও ভারত সীমান্তবর্তি জীবননগর উপজেলার অধিকাং গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সর্দি কাশি জ¦র গলা ব্যাথায় আক্রান্ত রোগী রয়েছে। এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক রোগীই নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে এ বর্তমানে শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগী রয়েছে ১৮১৮ জন। আজ শুক্রবার ভোর রাত থেকে বেলা ১১টার মধ্যে হাসপাতালেই মারা গেছেন ৫ জন। বৃহস্পতিবার জেলায় মৃতের সংখ্যা ছিলো ৯ জন। অবশ্য স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যে মৃতের সংখ্যা গতকাল ছিলো ৬ জন। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তে ১৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান।
চুয়াডাঙ্গায় আজ শুক্রবার যে ৬ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা শহরের কেদারগঞ্জ সিএ্যান্ডবিপাড়ার আইতুল ম-লের স্ত্রী আনজু খাতুন। ৪০ বছর বয়সী আলতু খাতুনকে ৫ জুলাই সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ ভোর ৫টার দিকে তিনি মারা যান। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বলেছেন, তিনি করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। নমুনা নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার আগেই মারা গেলেন ৪০ বছর বয়সী আনজু খাতুন। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হিজলগাড়ির তমিজ উদ্দীনের ছেলে রহিদুল ইসলাম সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। রাতে শ^াসকষ্ট বাড়লে মধ্যরাতে তাকে নেওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। ভোর ৬টার দিকে মারা যান ৪৫ বছর বয়সী রহিদুল। হাসপাতালের আরএমও বলেছেন তিনিও করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসাতালে আনা হয়। ৫ ঘণ্টার মাথায় তিনি মারা যান। জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোলারদাড়ি গ্রামের গোলাম রসুলের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুনকে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আনা হয়। ভর্তি করা হয় হলুদ জোনে। মধ্যরাতে মারা যান ৬০ বছর বয়সী মনোয়ারা বেগম। তিনিও উপসর্গে ভুগছিলেন। নমুনা নিয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আলমডাঙ্গা ওসমানপুরের সমশের ম-লের ছেলে আকবর আলী সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে শ^াসকষ্ট বাড়ে। তাকে মধ্যরাতে নেওয়া হয় সদর হাসপাতালে। সকাল পৌনে ৭টার দিকে মারা যান ৬৫ বছর বয়সী আকবর আলী। দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের হাজারী ম-লে ছেলে জহিরুল ইসলামকে গত ৭ জুলাই সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। নমুনা নেয়া হয়। হলুদ জোনে রেখেই চলছিলো চিকিৎসা। আজ শুক্রবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে মারা যান ৭০ বছর বয়সী জহিরুল ইসলাম। হাসপাতালের আরএমও বলেছেন, তিনিও উপসর্গে ভুগছিলেন। সদর উপজেলার মীর আব্দুল রাজ্জাকের ছেরে মীর আব্দুল হাই করোনা উপসর্গ নিয়ে ৮ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন। আজ শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে মারা যান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যে জেলার করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে যে তথ্য দেন, সেখানে বলা হয়, বৃহস্পতিবার নতুন ৩৮৭ জনের নমুনা নেওয়া হয়েছে। এদিন পূর্বের ৪০৫ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩৩ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩৯৯ জন। এদিন সুস্থ হয়েছেন ৭ জন। মোট সুস্থ হলেন ২৩৯২ জন। বর্তমানে সক্রিয় রোগীর মধ্যে হাসপাতালে রয়েছেন ১২৭ জন, নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন ১৭৪৬ জন। বৃহস্পতিবার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬ জন। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা ১৩১ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১৬ জন। বাকি ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে চুয়াডাঙ্গার বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার সময়।