প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির চাহিদা দিয়েও গণপূর্তের সাড়া মেলেনি দেড় সপ্তাহে
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেড ও হলুদজোনে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে অধিকাংশেরই শ^াসকষ্ট দূর করতে তথা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে দিতে হচ্ছে অক্সিজেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অক্সিজেন পোর্ট রয়েছে যা তার তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশি। তাছাড়া নতুন সংযুক্ত হাইফ্লো ক্যানোলা দিয়ে রোগীর অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে ৫টি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৫ জনকেই এ ব্যবস্থায় অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দেড়শো শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের নতুন ভবনে শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। মুর্মূষু রোগীর মধ্যে সকলকে যথাযথভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট পুরাতন ভবনেও রোগীদের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নেই। এখানেও জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেনের লাইন স্থাপন করা প্রয়োজন। বিষয়টি উপলব্ধি করেই চুয়াডাঙ্গা সিভির সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হোসেন বেশ কিছু চাহিদা দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তিনি গত ২৬ জুন চুয়াডাঙ্গা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর প্রেরিত চাহিদাপত্রে বলেছেন, নতুন ভবনের জন্য ৫০টি অক্সিফ্লোমিটার, পুরাতন ভবনের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন প্রতিস্থাপনসহ ১০শ টি পোর্ট ও ১শটি অক্সোফ্লোমিটার প্রয়োজন। সিভিল সার্জন এ চাহিদা দিলেও গতকাল পর্যন্ত গণপূর্ত বিভাগের তরফে তেমন সাড়া মেলেনি। এদিকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতারের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের হলুদ জোনে ৮৮জন, রেডজোনে ৮০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এদের প্রায় সকলেরই অক্সিজেন দেয়া প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে যে পরিমাণের সেন্ট্রাল অক্সিজেন পোর্ট রয়েছে তা প্রায় অর্ধেক। ফলে বাকিদেরর মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর তাদেরকে সিলিন্ডারের অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। যা দিয়ে কুলোনো প্রায় অসম্ভব। এছাড়া সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগারের সৌজন্যে ৫টি হাইফ্লো ক্যানোলা সংযুক্ত হয়েছে। যেসব রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা একেবারেই নেমে আসে তাদের এ প্রযুক্তির মাধ্যমে অক্সিজেন না দিলে রোগী বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাইফ্লো ক্যানেলোর মাধ্যমে ৫ জন রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়েছে। আরও কারো এভাবে অক্সিজেন দিতে হলে তা আর সম্ভব হবে না। এ অবস্থার মধ্যে চলছে চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা। এদিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীদের সেবার কাজে দায়িত্ব পালনের জন্য নিজ খরচে ১৫জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছেন। এ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে লকবল সংকট অনেকটাই কেটেছে। এদিকে গতকাল জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক বাবু খানের তরফে কয়েকটি অক্সিজেন কনসেনটেটর দিয়েছেন। এ মেশিন নিজেই অক্সিজেন উৎপাদন করে। এ মেশিনের সংখ্যা বাড়াতে পাররে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে রোগী মৃতের ঝুঁকি কমবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের হলুদ জোনে উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তির হার বেড়েছে। গতকালই এ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ৩১ জন। করোনা পজিটিভ নিয়ে রেডজোনে গতকালই ভর্তি হয়েছেন ১৫জন। রোগী যে হারে বাড়ছে এবং যেভাবে করোনা রোগীদের অক্সিজেনসহ জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হচ্ছে তা বর্ণনাকরাও যেন কঠিন। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও সেবিকাদের নাভিশ^াস উঠছে। ফলে সংক্রমণ রোধেও সকলকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। চলমান লকডাউনে জারিকরা বিধি নিষেধ যথাযথভাবে সকলে মেনে চললে সংক্রমণের হার হ্রাস পাবে। এতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বেশামাল হওয়ার ঝুঁকি কমবে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট যেমন রোগী নিয়ে ভয়াবহ অর্থ বাণিজ্যে মেতেছেন, তেমনই অক্সিজেন নিয়েও অনেকে ব্যবসার ফাঁদ পেতেছেন। এদিকেও প্রশাসনের আশু নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ