করোনা মহামারিতে চুয়াডাঙ্গায় মৃত্যুর পর মৃত্যু : কেউ হাসপাতালে কেউ বাড়িতে মারা যাচ্ছেন শ^াসকষ্টে

কোভিড-১৯ নতুন শনাক্ত ৫৩ জন : পজিটিভ ৩ উপসর্গ নিয়ে ৪ জনসহ মৃতের সংখ্যা একদিনে ১০ জন : জেলায় সক্রিয় রোগী হাজারের অধিক
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় আরও ৫৩ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩১৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ২১৭৩ জন। বর্তমানে জেলায় শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগী ১০৪৩ জন। উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালেই শতাধিক। গতকাল মঙ্গলবার জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৩ জন ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৪ জন। করোনা আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে ১ জন মারা গেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতলে, ১ জন মারা গেছেন নিজ বাড়িতে ও অপরজন মারা গেছেন রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এছাড়া করোনা মহামারির মধ্যে নিজ বাড়িতে জীবননগর এলাকার আরও ৩ জন মারা গেলেও এদের পরীক্ষা যেমন করোনা হয়নি, তেমনই মৃত্যুর আগেও নেয়া হয়নি হাসপাতালে। তবে এরাও সর্দি কাশিতে আক্রান্তের পর শ^াসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ মঙ্গলবার নতুন ১৩৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এদিন র‌্যাপিড এন্টিজেন ও পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার ১৩৫ জনের রিপোর্ট চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে। এর মধ্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৫৩ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ১৩ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৭ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১০ জন ও জীবননগর উপজেলার ২৩ জন। সদর উপজেলার নতুন শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে বেলগাছির ২ জন, দৌলাতদিয়াড়ের একজন, মুক্তিপাড়ার ২ জন, গুলশানপাড়ার ১ জন, সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার ১ জন, হাজরাহাটির একজন, লক্ষ্মীপুরের ১ জন, জালশুকার ১ জন, হাসপাতালপাড়ার ১ জন, দক্ষিণ হাসপাতাল পাড়ার ১ জন, বড় সলুয়ার ১ জন, বেগমপুরের একজন। আলমডাঙ্গা উপজেলার নতুন শনাক্তকৃত রোগীদের মধ্যে উদয়পুরের ২ জন, আনন্দধামের একজন, ছত্রপাড়ার ১ জন, জামজামির একজন, স্টেশনপাড়ার একজন ও ডাউকির একজন। দামুড়হুদা উপজেলার নতুন শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে রয়েছেন দর্শনার একজন, বিষ্ণপুরের ২ জন, মুক্তারপুরের ১ জন দামুড়হুদার দুজন। জীবননগর উপজেলায় বুধবার শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে মহেশপুর উপজেলার একজন রয়েছে। বাকীদের মধ্যে সাব্দালপুরের ২ জন, তারাণীপুরের ১ জন, তারানীবাসের ১ জন, কাশিপুরের দুজন, ধোপাখালীর ২ জন, আলীয়ারপুরের একজন, স্বরুপুরের একজন, মনোহরপুরের দুজন, সাদ্দামপাড়ার ১ জন, লক্ষ্মীপুরের ২ জন, মাহনগরপাড়ার ১ জন, চ্যাংখালী সড়কের ১ জন ও রাজনগরের একজন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতলের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুরের আবুল হোসেনের ছেলে হুমায়ুন কবীর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হন। তার নমুনা পরীক্ষা করোনা হয়। কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে ১৪ জুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি করানো হয়। রেডজোনেই আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ৪০ বছর বয়সী হুমায়ুন কবীর মারা যান। আলমডাঙ্গা উপজেলার খুদিয়াখালীর আবুল হোসেনের ছেলে মনিরুদ্দীন উপসর্গ নিয়ে সোমবার রাতে সাড়ে ৮টার দিকে সদর হাসপাতালে আসেন। তাকে হলুদ জোনে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। নেয়া হয় নমুনা। দেয়া হয় চিকিৎসা। এরই এক পর্যায়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে মারা যান ৬০ বছর বয়সী মনিরুদ্দীন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার লাশ দাফনের পরামর্শ দেয়া হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের আকুল মালিথার ছেলে পীর মোহাম্মদকে গত ২৭ জুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্দি কাশি জ¦রে ও গায়ে ব্যথায় ভুগছিলেন। তাকে হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। নমুনা নেয়া হয়। হলুদ জোনেই আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় ৬৫ বছরের পীর মোহাম্মদ মারা যান। লাশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। দামুড়হুদা দশমীপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে মনির হোসেনকে গত পরশু সোমবার রাত ৮টার দিকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। করোনা উপসর্গ নিয়ে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হয়। হলুদ জোনে রেখেই চরছিলো চিকিৎসা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান ৫২ বছর বয়সী মনির হোসেন মারা যান। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা কুলচারার শরবত আলীর স্ত্রী পারুলা বেগম বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাতালে। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে মারা যান ৫৫ বছর বয়সী পারুলা বেগম। এছাড়া জীবননগর উপজেলার রাজনগরের সিরাজুল ইসলাম সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হলে তিনি নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করান। পরীক্ষার রিপোর্টে তিনি কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত পজিটিভ হন। বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে ৫০ বছর বয়সী সিরাজুল ইসলাম মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়েন। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পলাশপাড়ার মো. মিণ্টুর স্ত্রী অনিয়া রহমান ওরফে নূরজাহান বেশ কিছুদিন ধরে উপসর্গে ভুগছিলেন। পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হয়। তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে নেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান ৩৩ বছর বয়সী নূর জাহান। তিনি ছিলেন উদ্যোগতাদের অন্যতম। অনলাইনে খাবার সরবরাহের প্রতিষ্ঠান হাঙ্গার প্যালেসের মালিক ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বেশ ক’জন করোনা আক্রান্ত বলে জানা গেছে।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ার অনন্তপুর গ্রামে আব্দুল হক (৬৬) নামের এক ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার তার শ্বাস কষ্ট দেখা দিলে পরিবারের সদস্যরা তাকে জীবননগর উপজেলা স্ব্যাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার করেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তিনি বেলা ৩ টার দিকে মারা যান তিনি। আব্দুল হক অনন্তপুর গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দীনের ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি কয়েকদিন যাবত সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হন। বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা চলছিল। বাদ মাগরিব জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়। সূত্র জানান, অনন্তপুর গ্রামে কয়েকজন ব্যক্তি জ্বর,সর্দি ও কাশির উপসর্গ নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করে বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ভয় আতঙ্কের কারণে এরা করোনা পরীক্ষা করাছেন না ।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যে জীবননগরে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার যাদবপুর গ্রামের মৃত করিম ম-লের ছেলে আজিম উদ্দিন (৭০) মারা গেছেন। তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ৭ টার সময় তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। অপর দিকে জীবননগর পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ পাড়ার মৃত নিয়ামত মোল্লার ছেলে সিরাজ মোল্লা (৭০) কয়েকদিন ধরে সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার এক পর্যায়ে নিজ বাড়িতেই তিনি মারা যান। এদের করোনা উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করানো হয়নি। নেয়া হয়নি হাসপাতালে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More