চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত আরও এক রোগীর মৃত্যু : সংক্রমণের হার ৫৭ শতাংশ
২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জন শনাক্ত : সক্রিয় রোগী ৩৮৪ জনের মধ্যে হাসপাতালে ৩০ জন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত আরও একজন রোগী মারা গেছেন। গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুবি খাতুন নামের আনুমানিক ৬৫ বছর বয়সী নারীর মৃত্যু হয়। তিনি দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত আজিজূল হকের স্ত্রী। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহের হার বাড়ানোর সাথে সাথে পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার হারে নেমেছে তলানিতে। যখন ৪শতাধীক নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার কথ তখন মঙ্গলবার মাত্র ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে। ২৮ জনের মধ্যে ১৬ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ হিসেবে শনাক্তের হার ৫৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
মঙ্গলবার নতুন ১৭০ জনের নমুনা নিয়ে মোট সংগ্রহীত নমুনর মধ্যে পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে বাকি রয়েছে ৫শ ৭২ জনের। নতুন শনাক্ত ১৬ জনের মধ্যে ১০ জন ভারত সীমান্তবর্তী জীবননগর উপজেলার। দামুড়হুদা উপজেলা সোমবার লকডাউন করা হয়েছে। এরপর জীবনননগরসহ গোটা জেলাই কি লকডাউনের আওতায় নেয়া হবে? করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যেই এ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। পূর্বের ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। শনাক্তকৃত ১৬ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলর একজন। তিনি কেদারগঞ্জের বাসিন্দা। আলমডাঙ্গা উপজেলার ৫ জনের মধ্যে হাটবোয়ালিয়ার একজন, যাদবপুরের একজন, ঘোষবিলার ১ জন, হারদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ও পারকুলার একজন। জীবননগর উপজেলার ১০ জনের মধ্যে দশজনই পৃথক দশটি গ্রামের বাসিন্দা। যেসব গ্রামে করোনা ভাইরাস রোগী মঙ্গলবার শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে জীবননগর উপজেলা শহরের বাজারপাড়া, কালা, দৌলতগঞ্জ, বসুতিপাড়া, সুবলপুর, মৃগমারী, বেনীপুর, সেনেরহুদা, গহ্বেশপুর ও দেহাটী। দামুড়হুদা উপজেলার নমুনা গ্রহণকারীদের পরীক্ষার রিপোর্ট মঙ্গলবার পাওয়া যায়নি। এ উপজেলাতেই রয়েছেন বেশি সক্রিয় রোগী। দামুড়হুদা উপজেলায় বর্তমানে সক্রিয় রোগী ১৮৬ জন। বাড়িতে রয়েছেন ১৬৯ জন। হাসপাতালে ১৫ জন। রেফার্ড ২ জন। সদর উপজেলার ৯২ জন সক্রিয় রোগীর মধ্যে ৮০ জন বাড়িতে, ১১ জন হাসপাতালে একজন রেফার্ড রয়েছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলায় সক্রিয় ৩৩ জন রোগীর মধ্যে ২৯ জন বাড়িতে, ৩ জন হাসপাতালে একজন রেফার্ড রয়েছেন। জীবননগর উপজেলায় সক্রিয় রোঘী ৭৩ জন। এর মধ্যে একজন হাসপাতালে। বাকিরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। অবশ্য হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। অক্সসিজেনের চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ। ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে এ সমাজকে রক্ষা করতে সকলে নিজ নিজ অবস্থানে সতর্ক না হলেই সর্বনাশ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এরপরও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার তেমন নজির মিলছে না। অবশ্য দামুড়হুদা এলাকায় প্রশাসন সর্বাত্মক তৎপর।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা গেছেন রুবী খাতুন নামের এক নারী। আনুমানিক ৬৫ বছর বয়সী নারী সম্প্রতি সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হন। ৬ জুন তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়। পরদিন রিপোর্টে তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেয়া হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম বলেন, শিরিন রুবি নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ১১ হাডজার ৩শ ৬৯ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেছে ১০ হাজার ৭শ ৯৭জনের। নতুন ১৬ জনকে নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩শ ৪৫ জন। মঙ্গলবার কেউ সুস্থ না হলেও মোট এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮শ ৮৯ জন। মারা গেছেন ৭৩ জন। অপরদিকে দেশে সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৩ হাজার ২শ ৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩শ ১৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৩৩ হাজার ২শ ৯১ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২শ ৪৩ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েৈেছন ৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৩ জন। ২৮ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫০ জন। এ নিয়ে সরকারি হিসেবে করোনা আক্রান্ত ১৩ হাজার ২শ ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।