স্টাফ রিপোর্টার: হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এক নারীকে বিয়ের প্রলোভনে দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রাথমিক প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ।
রোববার বিকেলে নাশকতা ও ধর্ষণের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের দুই থানায় করা পৃথক ছয় মামলায় মামুনুলের ১৮ দিনের রিমান্ড শেষে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকতারা।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সেই মামলায় জান্নাত আরা ঝর্ণা যে বক্তব্য দিয়েছে আমরা মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই বক্তব্যর সত্যতা পেয়েছি। যদিও এটি একটি বিচারাধীন বিষয়। আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ঝর্ণাকে বিয়ের সাক্ষী, কাবিননামা, দেনমোহর এমন কি কোনো লিখিত কিছুই মামুনুল হকের কাছে নেই। তার একাধিক বাড়িঘর ও বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে যার কোনো আয়ের উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। প্রতিমাসে সে এক কোটি টাকা অনুদান পেত। ধারণা করা হচ্ছে- সেই অনুদানের টাকা দিয়েই সে বাড়িঘর করেছে।’
গত ৩০ এপ্রিল বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, প্রতারণা, নির্যাতনের অভিযোগ এনে সোনারগাঁও থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। মামুনুল হক দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও দায়ের করা মামলায় জান্নাত নিজেকে মামুনুল হকের স্ত্রী বলে স্বীকার করেননি।
মামলার এজাহারে জান্নাত আরা ঝর্ণা বলেন, ‘আমার সাবেক স্বামী মাওলানা শহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ায় ২০০৫ সালে মামুনুল হকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মামুনুল হকের সঙ্গে আমার পরিচয় হওয়ার পূর্বে আমাদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখে শান্তিতে অতিবাহিত হচ্ছিল। যার ফলে আমাদের ঘরে দুটি সন্তান জন্ম হয় (আব্দুর রহমান, মো. তামিম)। মামুনুল হক আমাদের বাসায় অবাধে যাতায়াত করতেন। আমার ওপর তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি করতে থাকেন তিনি। ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট আমার স্বামীর সঙ্গে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।’
জান্নাত বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০১৮ সাল থেকে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে আমাকে নিয়ে রাতযাপন করেন।’
অভিযোগে জান্নাত আরও বলেন, ‘বিচ্ছেদের পর আমি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। এ সময় মামুনুল আমাকে খুলনা থেকে ঢাকায় আসার জন্য বলেন। আমি ঢাকায় চলে আসি। মামুনুল আমাকে তার অনুসারীদের বাসায় রাখেন। সেখানে নানাভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দেই। এরপর তিনি উত্তর ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় আমাকে সাবলেট রাখেন। একটি বিউটি পার্লারে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় থাকার খরচ মামুনুলই দিচ্ছিলেন।’
জান্নাত বলেন, ‘গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক আমাকে নিয়ে যান। রিসোর্টের পঞ্চম তলার ৫০১নং কক্ষে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মামুনুল হক আমাকে ধর্ষণ করে। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। তারা আমাদের পরিচয় জানতে চায়। ভালো উত্তর দিতে না পারায় আমরা স্থানীয় জনগণের রোষানলে পড়ি। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের (কলাবাগান) বাসায় ফিরতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আমাকে আটকে রাখেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি।’
তিনি বলেন, ‘পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আমার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকে উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।’
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ