স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ রোববার মধ্যরাতে। এরপর বিধিনিষেধ আর বাড়বে কি-না, সেই ব্যাপারে গতকাল শনিবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সিদ্ধান্ত যাই হোক আজ রোববারই তা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সেই শিথিল লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। পরে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। পরে পাঁচ দফা লকডাউন বা বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ২৩ মে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ৭ দিন অর্থাৎ ২৪ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক মানুষকে সেবা দেয়ার অনুমতি পায়। এছাড়া বিধিনিষেধে আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা ছিল। খোলা ছিল শিল্প-কারখানাও। তবে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া যথারীতি অফিস বন্ধ রয়েছে। সীমিত পরিসরে হচ্ছে ব্যাংকের লেনদেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিধিনিষেধ বাড়ানো বা তুলে দেয়ার বিষয়ে সরকার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। কারণ করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শঙ্কা হয়ে ঝুলে আছে। সবকিছু একেবারে খুলে দিলে মানুষের বেপরোয়া আচরণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে বিপর্যয় হতে পারে। আবার অফিস-আদালত দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখাও ক্ষতির কারণ হচ্ছে। বিধিনিষেধ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা একজন সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, রোববারের পর বিধিনিষেধ বাড়বে নাকি তুলে দেয়া হবে, সেই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মিটিংয়ের জন্য আমরা রেডি ছিলাম, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যে একটা মিটিং হয়, সেটা এখনও হয়নি। সরকার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছে, বিদেশের খোঁজ-খবর নিচ্ছে। মোটামুটি সব তো চলছেই। তারপরও বিধিনিষেধ থাকলে একটা সুবিধা তো পাওয়া যায়ই। তিনি বলেন, এছাড়া এখন সীমান্ত এলাকাগুলোতে লকডাউন দেয়া হচ্ছে। সেটা বহাল রাখার সঙ্গে বেশি সংক্রমিত এলাকায় লকডাউন আরোপ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সার্বিক লকডাউন তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধিতে জোর থাকবে। আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন না থাকলেও কিছু বিধিনিষেধ তো থাকবেই। তাই লকডাউনের মেয়াদ বাড়নো কিংবা না বাড়ানোর বিষয়ে এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। ওই সচিব আরও বলেন, ‘রোববার ফার্স্ট আওয়ারে (প্রথম ঘণ্টায়) একটি মিটিং হতে পারে। সেখানে হয়তো সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।’ লকডাউন বা বিধিনিষেধ বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একটি মিটিংয়ে আছি। এখন কথা বলতে পারব না।’
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় ঢেউ রোধে টানা ৫৬ দিনের লকডাউন (বিধিনিষেধ) রোববার শেষ হচ্ছে। লকডাউন আরও বাড়ানো হবে কি না, সে ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। এ ব্যাপারে কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও কোনো সুপারিশ করেনি। ফলে সোমবার থেকে মানুষের চলাচলে আর বিধিনিষেধ থাকছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। দ্বিতীয় ঢেউ রোধে ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে এ লকডাউন শুরু হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা সংক্রমণ কমে আসা এবং জীবন-জীবিকার কথা মাথায় রেখে লকডাউনের মেয়াদ আর বাড়ানো হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখে এখন অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন কার্যকরে জোর দেয়া হবে। সাধারণত কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিধিনিষেধ বা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত কমিটি লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন- লকডাউন আর বাড়ছে না। একজন জানান, নতুন করে আর লকডাউন না দিয়ে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন কার্যকরের চিন্তা করছে সরকার। লকডাউন বাড়ানো নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, লকডাউন আর না বাড়লে এ নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে না। তবে মানুষের চলাচলে সব বিধিনিষেধ ওঠার পর পর্যটন এলাকাসহ যেসব জায়গায় জনসমাগম হয় সেখানে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রোধে ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়। ওইদিন থেকে মূলত বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহণ বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে সেই শিথিল লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। এরপর ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৮ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। এটি পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে কয়েক দফায় সেই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রোববার মধ্যরাতে।
কঠোর লকডাউন মধ্যে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়। এ সময় জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ আছে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি রয়েছে। ‘জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা’ করে রোজার আগে বিধিনিষেধ শিথিল করে দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এখনো সেই নিয়মই বহাল আছে। এরই মধ্যে ২৪ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সব ধরনের গণপরিবহণ (দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ) চলাচলের জন্য অনুমতি দেয় সরকার। এছাড়া হোটেল, রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানগুলোতে ধারণক্ষমতার অর্ধেক আসনে বসে খাবার অনুমতি দেয়া হয়।
পূর্ববর্তী পোস্ট
চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ৭ জেলায় আরও ১৩ জনের শরীরে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ