আরমানিটোলায় অগ্নিকাণ্ডে দিশেহারা শারমিন : পরিবারের সকলেই দগ্ধ
ঢাকা অফিস: শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রধান ফটকের সামনে নিকজনদের জড়িয়ে কাঁদছেন পরিবারের বড় মেয়ে শারমিন সরকার। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) হারিয়েছেন ছোট বোন ইডেন কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তারকে।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে লাইফ সাইপোর্টে মৃত্যুর প্রহর গুণছে ছোট বোন মুনা সরকার ও তার স্বামী আশিকুজ্জামান। মাও আছেন আইসিইউতে। বাবা ইব্রাহিম সরকার ও ছোট ভাই জুনায়েদ এর অবস্থাও ভালো নেই। পরিবারের এমন বিপদে নিজেকে সামাল দিতেই যেনে পারছেন না। সন্তানাও নেই তার কাছে। শনিবার ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রধান ফটকে তাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন শারমনি। তিনি বলেন, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর আমার ছোট ভাই জুনায়েদ আমাকে ফোন দেয়। ফোনে বলে আপা আমাদের বাসায় আগুন লাগছে। আমাদের চারদিকে ধোয়ায় ভরে গেছে। আমরা শ্বাস নিতে পারছি না। আমাদের জন্য দোয়া করো। এইটাই ছিল শেষ কথা তারপর আমরা আসতে আসতে তাদেরকে একে একে সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। শারমিন বলে, কাল আমার ছোট বোন চলে গেলে আজ ছোট বোন ও তার স্বামীও লাইফ লাইফসাপোর্টে। এই কয়দিন হলো মাত্র তাদের বিয়ে হয়েছে। মার্চের ১২ তারিখে আমার বোন মুনা সরকার সঙ্গে আশিকুজ্জামান খানের বিয়ে হয় বলে জানান শারমিন সরকার। জানা গেছে দুইজনই শিক্ষার্থী। মুনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর আশিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র। এ প্রসঙ্গে হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক চিকিৎসক সামন্ত লাল বলেন, আগুনে দগ্ধ ২১ জন রোগী বার্ন ইউনিটে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে একজনকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর ২০ জনকে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে চারজনকে আইসিইউতে রাখা হয়। এই চারজনের মধ্যে দুজন লাইফ সাপোর্টে আছে। বাকি দুজনও শঙ্কামুক্ত নয়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক আরও বলেন, আমি রোগীদের সাথে কথা বলেছি- তারা কেউ কেউ জানিয়েছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, কথা বলতে গেলে আটকে আসছে এবং কাশি হচ্ছে। তাদেরকে এখনই ঝুঁকিমুক্ত না বলে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে রাখছি। আইসিইউয়ের দু’জন সবচেয়ে বেশি ক্রিটিক্যাল, বাকি রোগীরাও ক্রিটিক্যাল।
শুক্রবার ভোররাত সোয়া তিনটার দিকে আরমানিটোলার একটি ভবনে আগুন লাগে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ১৯ টি ইউনিটের তিন ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই ভবনের পাশের একটি ভবনের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ওই ভবনের নিচে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। তার দাবি, আশপাশের প্রায় সব ভবনেই এ ধরনের গুদাম রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো বোঝা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস তদন্ত কমিটি গঠন করবে।
সূত্র জানায়, আগুন লাগার পরপর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় ভবনের নিচতলা। ধীরে ধীরে ধোঁয়া উঠতে থাকে ওপরের দিকে। এতে ওপরের তলার বাসিন্দারা আগুনের বিষয়টি টের পান। এ সময় লোকজন বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেও ধোঁয়া ও আগুনের কারণে বের হতে পারেননি। তারা ওপরের দিকে উঠতে থাকেন। তবে ভবনের ছাদ তালাবদ্ধ থাকায় কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। বিভিন্ন ফ্লোরে আটকে থাকা লোকজন চিৎকার করতে থাকেন। আটকে পড়া বাসিন্দারা বারান্দা ও জানালা থেকে মুঠোফোনের আলো জ্বেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
আরমানিটোলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ২১ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডে মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে।