তদারকি ছাড়াই চলছে কোটি টাকার রাস্তা নির্মাণ কাজ
গাংনী প্রতিনিধি: পাথর ও বিটুমিনের মিক্সার চলছে। তৈরি হচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং। কার্পেটিং কাজের পুরো প্রক্রিয়াই চলছে ঠিকাদারের ইচ্ছেমাফিক। সেখানে তদারকি প্রতিষ্ঠানের কারও উপস্থিতি ছাড়াই প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের এ রাস্তার কাজ সম্পন্ন হতে চলেছে। এলজিইডি গাংনী উপজেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের পাশ কাটিয়ে জেলা কার্যালয়ের আলোচিত এক ব্যক্তি ঠিকাদারের সাথে জোগসাজসে এ কাজটি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, জিকেআরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় গাংনী উপজেলার পীরতলা বাজার থেকে নাটনাপাড়া ঘাটের দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার কার্পেটিং কাজের টেন্ডার দেয় এলজিইডি। প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রাক্কলিত মূল্যের কাজটি পান চুয়াডাঙ্গার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাইদুল হাসান জোয়ার্দ্দার। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে গাংনীর আলোচিত ঠিকাদার মজিরুল ইসলাম।
গত ১৪ ও ১৫ এপ্রিল ঠিকাদারের লোকজন কার্পেটিং কাজ করছে। প্রাইমকোড থেকে শুরু করে কার্পেটিং ফিনিসিং পর্যন্ত নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু অভিযোগ দেখার কেউ নেই কাজেরস্থলে।
সরেজমিন রাস্তায় গিয়ে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। রাস্তায় ধোলাবালির মধ্যেই চলছে কার্পেটিং। বিটুমিন ও পাথরের সংমিশ্রণ ও করা হচ্ছে শ্রমিকদের ইচ্ছেমাফিক।
গাংনী উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী আলাউদ্দীন দেখভালের দায়িত্বে আছেন। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি বাসায় অবস্থান করছেন। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ না করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ উপেক্ষা করে ঠিকাদার মজিরুল ইসলাম জেলা কার্যালয়ের আলোচিত সেই আব্দুর রহমানের শক্তিতে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, রাস্তার ডাব্লিউবিএম কাজের পর প্রয়োজনীয় ল্যাব পরীক্ষা ছাড়াই কার্পেটিং করা হচ্ছে। এলজিইডি মেহেরপুর নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের আলোচিত আব্দুর রহমান ১৩ এপ্রিল কাজেরস্থলে নিয়ে কাপের্টি করার অনুমতি দেন। ফলে তদারকি প্রতিষ্ঠান গাংনী উপজেলা প্রকৌশলীকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে কার্পেটিং কাজ শুরু করেন মজিরুল ইসলাম।
কার্পেটিং কাজ শুরুর আগে প্রয়োজনীয় ল্যাব টেস্ট বাধ্যতামূলক। অথচ টেস্ট ছাড়াই কাপেটিং কাজ প্রায় শেষের পথে। এতোবড় অনিয়মের পেছনে জেলা কার্যালয়ের অসাধু ব্যক্তিরা জড়িত তাই উপজেলা প্রকৌশলীর কিছুই করারও নেই।
প্রয়োজনীয় টেস্ট রিপোর্ট ও তদারকিকারী ব্যক্তি ছাড়াই কিভাবে কার্পেটিং কাজ হচ্ছে জানতে চাইলে এ সড়কটির প্রোজেক্ট ম্যানেজার ও এলজিইডি গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ বলেন, আমার কাছে কোনো প্রকার তথ্য ও রিপোর্ট নেই। জেলা অফিসের নির্দেশনায় মজিরুল ইসলাম কাজ করছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কাজ করতে নিষেধ করলেও তিনি তা মানছেন না।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন এক নেতার নাম ভাঙিয়ে এলজিইডি’র আব্দুর রহমান ঠিকাদারদের সাথে আতাত করে এসব অনিয়ম করে থাকেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর নীরবতার কারণে উপজেলা অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ আব্দুর রহমানকে সমীহ করেন। এই সুযোগে আব্দুর রহমান অসাধু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিম্নমানের রাস্তা নির্মাণ কাজ করে পূর্বের মতোই নিজের পকেট ভারি করছেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ও শুক্রবার সকালে আব্দুর রহমান ও নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইলে কয়েকবার কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
নির্মাণ কাজ শেষে বিল উত্তোলনের জন্য প্রোজেক্ট ম্যানেজারের ছাড়পত্র শুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানের এ কাজের বিল উত্তোলনের জন্য প্রোজেক্ট ম্যানেজারকে প্রয়োজন।
এ বিষয়ে প্রোজেক্ট ম্যানেজার ও গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ বলেন, আমি কাজের সাইড দেখিনি এবং প্রয়োজনীয় টেস্ট রিপোর্ট আমাকে সরবরাহ করা হয়নি। তাই বিল প্রস্তুত ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেবে।