ট্রেন-বাস-লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় : বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার: লকডাউনের ঘোষণা আসার পর থেকে রাজধানী ঢাকা ছেড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের। মহামারি ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে এক সপ্তাহ লকডাউন শুরু হচ্ছে আজ সোমবার থেকে। ফলে সারা দেশে গণপরিবহন চলাচলও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এসময় পণ্য পরিবহন, জরুরি সেবা, জ্বালানি, ওষুধ, পচনশীল দ্রব্য ও ত্রাণবাহী পরিবহন, সংবাদপত্র, গার্মেন্টসসামগ্রী পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। লকডাউনের ঘোষণা আসার পর শনিবার থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করে মানুষ। গতকাল রবিবার রাজধানীর বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও রেল স্টেশনে ছিলো ঘরে ফেরা মানুষের ঢল। তবে স্বাস্থ্যবিধির নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সবাই ছুটছে নিজ বাড়ির পথে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে কমলাপুর রেল স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে।
লকডাউনে লঞ্চ চলাচল নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটাই বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নৌপরিবহন অভ্যন্তরীণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর পরিবহন বিভাগের উপপরিচালক এহতেশামুল পারভেজ। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য যাত্রীদের সব সময় নির্দেশ দিচ্ছি। প্রত্যেকটা লঞ্চে কড়াকড়ি নির্দেশ দেওয়া আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য। তবুও অভিযোগ আসছে যে যাত্রীরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। যাত্রীদের চাপে সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশের বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের দেওয়া গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ বাড়া বৃদ্ধি লঞ্চে বাস্তবায়ন করলেও ভাড়া বৃদ্ধিতে লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা আগের মতোই আছে। এ বিষয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলেন, যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় আমরা চাইলেও নির্ধারিত যাত্রীর তুলনায় একটু বেশি যাত্রী উঠছে। তবে আমরা বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলছি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা থেকে চাঁদপুরে ডেকের ভাড়া আগে ১২০ টাকা ছিল এখন ২০০ টাকার বেশি নেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষ ৪০০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা-ভোলা (ইলিশা) সিঙ্গেল কেবিনের পূর্বের ভাড়া ৮০০ টাকা, ডাবল ভাড়া ছিলো ১৬০০ টাকা। ঢাকা-বরিশাল (মুলাদী) ডেকের ভাড়া পূর্বে ছিল ২২০ টাকা এখন ৪০০ টাকা।
গতকাল দিনভরই দেখা গেছে, হাতে ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ফুটপাতে হাঁটছেন নানা পেশার মানুষ। তাদের লক্ষ্য গন্তব্যের বাসে ওঠা। অনেকেই জানিয়েছেন, লকডাউনের সময় কর্মহীন সময় কাটাতেই গ্রামের দিকে ছুটছেন তারা। এদের মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি। তবে বাস টার্মিনালে অনেক যাত্রী ও টিকিট কাউন্টারে অনেকের মুখের পরিবর্তে থুতনিতে মাস্ক দেখা যায়।
রাজধানীর সড়কগুলোতে ছিলো তীব্র যানজট। একদিকে গরম, অন্যদিকে গাড়ির হর্ন, বাগিবত-া, শোরগোল মিলে ছিলো জনদুর্ভোগ। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও সাধারণ যাত্রীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। কেউ ছুটছেন গ্রামের বাড়িতে। তারা জানিয়েছেন, গত দুই দিনের (শনি ও রবিবার) রাজধানী ছেড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। যাত্রী চাপের কারণে কোনোভাবেই গণপরিবহনের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ম রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
অপর যাত্রীদের অভিযোগ ছিলো, বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া দিয়েও টিকিট মিলছে না। অন্যদিকে বাস কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় বাসের সিট অর্ধেকে নেমে আসায় টিকিট ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে। এছাড়া গতকাল ছিল যাত্রীদের বাড়তি চাপ। যা সাধারণত ঈদের সময় দেখা যায়। আর যাত্রী চাপের জন্যই টার্মিনালগুলোতে মানুষের জটলা তৈরি হয়। এদিকে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখলাী বাস টার্মিনাল ছাড়াও কমলাপুর বিআরটিসি কাউন্টার, মতিঝিল কাউন্টার ও ফুলবাড়িয়া কাউন্টারেও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর টানা কয়েক মাস করোনার তা-ব চলে। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে পরিস্থিতি ক্রমে শিথিল হয়ে আসতে শুরু করে। কিন্তু হঠাত করেই গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এরই মধ্যে গেলো ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে করোনার গণটিকা দান কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More