রোববার এক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজনের সকলেই নিহত হয়েছেন। সকালে ঝিনাইদহ মহেশপুরের সামন্ত গ্রামের বাড়ি থেকে সকলে মিলে একটি মাইক্রোবাসে ঢাকার নবীনগর যাচ্ছিলেন। যেখানে পরিবারের কর্তা মহর আলী থাকতেন, তিনিও এক বছর আগে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই সকালে ফরিদপুরের মধুখালীর মাঝকান্দিতে এক ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষে ওই পরিবারের ৫ জনসহ ৯ জন নিহত হন। তাঁরা সবাই ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সামন্তা গ্রামের বাসিন্দা।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন সামন্তা গ্রামের মহর আলীর স্ত্রী চায়না বেগম ওরফে কুটি (৪৫), তাঁর মেয়ে মরিয়ম বেগম (২২), জামাই জুয়েল রানা (২৬), মহর আলীর বোন আমেনা বেগম (৪৩) ও মহর আলীর নাতি মুজাহিদ (৩)। তাঁদের সঙ্গে আরও নিহত হয়েছেন মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও বাগানমাঠ গ্রামের বাসিন্দা আইনজীবী আব্বাস আলী (৫৬), সামন্তা গ্রামের বাসিন্দা ও কাজিরবেড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মাতবর নজরুল ইসলাম (৫৫), মাইক্রোবাসচালক বাগানমাঠ গ্রামের আবদুল আলিম (৩০) ও মহর আলীর মা যশদা বেগমের পালিত ছেলে আবদুল্লাহ (৭)। আরও চারজন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। সামন্তা গ্রামের বাদশা মিয়া জানান, মহর আলীরা ছিলেন দুই ভাই। তাঁর আরেক ভাই শফিকুল ইসলাম প্রায় ছয় বছর ধরে নিখোঁজ। মহর আলী চলে যান ঢাকায়। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকার নবীনগর এলাকায় থাকতেন। এক বছর পূর্বে তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। তাঁর দাফন এলাকাতেই হয়েছে।
মহর আলী হারিয়ে যাওয়া ভাই শফিকুল ইসলামের ছেলে সাগর হোসেন বলেন, তাঁর চাচা নবীনগর এলাকায় থাকতেন। সেকানে কে বা কারা তাঁকে হত্যা করে। তাঁর মৃত্যুর পর খোঁজ পান, তিনি যে এলাকায় থাকতেন, সেখানে বাড়ি রেখে গেছেন। এ খবর পেয়ে আজ তাঁর পরিবারের সবাই সেখানে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে আইনজীবী ও গ্রামের মাতবর নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। চাচা মহর আলীর সামন্তা গ্রামের বাড়িতে যাঁরাই থাকতেন, তাঁদের কেউ আর বেঁচে নেই। বাড়িটি শূন্য হয়ে গেছে। পাশে তাঁর ফুফু আমেনা বেগম ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করতেন। আমেনা বেগমও মারা গেছেন। তাই বাড়িতে এখন কান্নার কেউ নেই।
মহর আলীর শাশুড়ি বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুন মাঝেমধ্যে কান্নাকাটি করছেন। তিনি খুজে ফিরছেন তাঁর মেয়ে-নাতিদের। যাকে পাচ্ছেন কান্নাকণ্ঠে তাঁকেই প্রশ্ন করছেন, ‘আমার মনিরা ভালো আছে তো?’ গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন জানান, দুর্ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের পাঁচজন এক পরিবারের। আর এক গ্রামেই মারা গেছেন সাতজন। আর দুজন আছেন পাশ্ববর্তী বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাগানমাঠ গ্রামের। ফলে তাঁদের গ্রামটিতে এখন শুধুই কান্নার আওয়াজ। এবাড়ি–ওবাড়ি চলছে কান্না আর কান্না। এলাকার অনেকে ছুটে গেছেন ঘটনাস্থল মাঝকান্দি ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে লাশগুলো হাসপাতাল থেকে গ্রহণ করে তাঁরা রওনা দিয়েছেন। রাতে লাশগুলো গ্রামে নেয়া হবে।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, তাঁরা সাতজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। পরে আরও একজন মৃত্যুর খবর শুনেছে
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ