স্টাফ রিপোর্টার: ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই- আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ ইসির অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন এবং অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করুন। গতকাল বুধবার রাজধানীর খিলগাঁও তালতলায় এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল কালো আইন বাতিলের দাবি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে’ এই সমাবেশ হয়। তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের সামনে সড়কে দুটি ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ করে বিএনপি। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। দুপুর ১২টার পর থেকেই ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসতে শুরু করেন। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর আগেই সমাবেশস্থল ও এর আশপাশের এলাকা নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দলীয় নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তুলেন। এতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটসহ এর আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেন পুলিশ সদস্যরা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। তারা বাড়ি-ঘর, গরু-ছাগল বিক্রি করে মামলা লড়ছে। আমাদের ছেলেরা ঢাকার রাজপথে রিকশা চালায়! আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমাদের দাঁড়াতে হবে, এই অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আমার যে ন্যায্য হিস্যাগুলো রয়েছে- তা আমি চাইতে পারব না? দুঃখ হয়, যখন দেখলাম- ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসলেন। এসে ব্রিফিং ও সভা করলেন। সীমান্ত হত্যার বিষয়ে আমাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, অপরাধ না হলে হত্যা হবে না। মির্জা ফখরুল প্রশ্ন রাখেন, হত্যা করার অধিকার কে কাকে দিয়েছে? বিনা বিচারে কোনো সভ্য দেশের আইনে কাউকে হত্যা করার অধিকার দেয়নি। নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ কৃতদাসের চেয়েও খারাপ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই মুহূর্তে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। আমরা এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা গঠন করতে হবে। বর্তমান সরকার খুব দুর্বল সরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, এত দুর্বল যে, নিজেদের রক্ষা করবার জন্য প্রতিদিন নতুন নতুন আইন করতে হয়। একটা আইন করেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। মোবাইল বলেন, ফেসবুক খোলেন- এগুলো ওরা নিয়ন্ত্রণ করে, মনিটর করে। কে কোথায় কী বলে না বলে ওইগুলো দেখে। তারা যন্ত্র নিয়ে এসেছে ইসরাইল থেকে। যে দেশের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যেটা আলজাজিরা টেলিভিশন আবার সেটা প্রচার করে দিয়েছে। কী ভয়াবহ প্রচার। সেই প্রচারে আমরা বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম আমাদের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত কঠিন সময় অতিক্রম করছি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতো বড় কঠিন সময় স্বাধীনতার ৫০ বছরে জাতি কখনো অতিক্রম করেনি। কিন্তু ৫০ বছর পরে আমরা কী দেখছি, সরকার আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে। এই সরকার বন্দুকের মুখে আমাদের সব অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে!
তাবিথের আউয়ালের সভাপতিত্বে এবং মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু ও এএফএম আব্দুল আলিম নকির পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এসএম জাহাঙ্গীর, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মীর সরফত আলী সপু, আমিনুল হক, শামীমুর রহমান শামীম, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, রাজিব আহসান, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, হাফিজুর রহমান, এবিএমএ রাজ্জাক, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ