জীবননগর থেকে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস
জামানতের টাকা ফেরত পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ
জীবননগর ব্যুরো: জীবননগরে স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড স্টার গোল্ড এগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামের একটি ভুয়া কোম্পানি চাকরি দেয়ার নামে অর্ধকোটি টাকা জামানত নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত যুবকরা তাদের জামানতের টাকা ফেরত পেতে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর জীবননগরের আঁশতলা পাড়ার মো. ইকতিয়ার উদ্দিনের বাড়ির দ্বিতীয় তলা জীবননগর উপজেলা জোনাল অফিসের নামে ভাড়া নেয় প্রতারক চক্র। ওই বাড়িতেই স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড স্টার গোল্ড এগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামের একটি বিশাল সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন তারা। পরবর্তীতে জীবননগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবকদেরকে কোম্পানিতে মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ২০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জামানত নেয়া হয়। এভাবে তারা শতাধিক বেকার যুবকের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর এই যুবকদের হাতে ভুয়া নিয়োগপত্র তুলে দেয়া হলেও তাদেরকে কোনো কাজ এবং বেতন দেয়া হয়নি। বেতন পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে লাপাত্তা হয়ে যান ওই কোম্পানির কর্মকর্তারা।
এছাড়াও এই প্রতারক চক্রটি এলাকাবাসীর মধ্যে আস্থা অর্জনে শীতে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের সুজন হোসেন বলেন, ‘সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিকে কর্মরত মো. মোস্তাক আহম্মদের কাছ থেকে জানতে পারি স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে লোক নিয়োগ করা হবে। এরপর ওই অফিসে যোগাযোগ করে মোস্তাক আহম্মদের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে ২০ হাজার টাকা বেতনে শাখা ব্যবস্থাপকের চাকরি নিই। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাকে কোনো কাজ এবং বেতন দেয়া হয়নি। গত ১০ দিন ধরে ওই কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না এবং মোবাইলে ফোন দিলেও তা ধরছেন না’। একই অভিযোগ করেন ওই কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার হাসিব ইকবাল এবং প্রকল্প সহকারী বখতিয়ার উদ্দীন। তারা জানান, মোস্তাক আহম্মদের মাধ্যমে তারা ৩০ হাজার ও ১২ হাজার টাকা জামানত দিয়েছেন চাকরি নেয়ার জন্য। এছাড়া বিভিন্ন পদে চাকরি নেয়ার জন্য জামানত হিসেবে নাজিবুল হক ২০ হাজার টাকা, নাসের আলী ২০ হাজার, রুবিনা আক্তার ১৫ হাজার, রেবেকা সুলতান ২০ হাজার, নাদিয়া জাহান তানিয়া ১৫ হাজার, আশরাফুল হক ১০ হাজার, সাগরিকা আক্তার ৮ হাজার টাকা দিয়েছেন। এভাবে শতাধিক ব্যক্তি প্রায় অর্ধকোটি টাকা দিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানে।
উথলী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত রুবিনা আক্তার বলেন, ‘স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস নামের ভুয়া কোম্পানির কাছে বাড়ি ভাড়া দেয়া বাড়িমালিক ইখতিয়ার উদ্দীনও দায় এড়াতে পারেন না। তিনি খোঁজখবর না নিয়ে বাড়িভাড়া দিয়ে আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন’।
সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিকে কর্মরত মো. মোস্তাক আহম্মদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে দিইনি। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। বরং আমি নিজেই আমার ভাগ্নের একটা সরকারি চাকরির জন্য ৭ লাখ টাকা ওই প্রতারক চক্রের কাছে দিয়ে প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। বাড়ি মালিক ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, প্রতারক চক্রকে ধরার জন্য সর্ব্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ওই ভুয়া কোম্পানির ডিভিশনাল ম্যানেজার শাকিল আহম্মেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন জানান, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পাবার পর প্রতারক চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলা হয়েছে।