ট্রেনের বরাদ্দ নেয়া কামরা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও নুহাশ পল্লিসহ সাহেব বাড়ি ঘোরার রেকর্ড

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণ : বাঁধভাঙা উল্লাস মেতেছিলো গাজীপুরের শালবন

বিশেষ প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণ মানেই সপরিবারে সদস্যদের মিঠাই মুড়কিতে মাখামাখি। অতীতের সব দস্তাবেজ ডিঙ্গিয়ে নতুনত্বের পরশে নব উদ্যোমে কাজে মনোনিবেশ করার প্রস্তুুতি। এবারের আয়োজনও বাঁধ ভাঙা উল্লাসে যেনো মেতে ছিলো ধরিত্রী। দুদিনের লম্বা ভ্রমণ। তাও আবার ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট পুরোটাই বরাদ্দ নিয়ে। শালবনের মাঝে অবকাশ কাটানো কোটেজেন পুরোটাই ভাড়ায় নিয়ে রাত- দিনের মাতামাতি। এর পাশাপাশি গাজী পুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এবং সাড়া জাগানো কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের নু হাশ পল্লি পরিদর্শন। কবজি ডুবিয়ে ভুড়িভোজ? প্রেসক্লাবের আয়োজনে এটা তো অনেকটাই অনিবার্য্য।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক পরিদর্শন কেনো? প্রায় ৪ হাজার একর বনভূমিতে গড়ে তোলা পার্ক। বিশাল এলাকা জুড়ে বন্য প্রাণীতে ভরিয়ে তোলা বন। তার মাঝে কাচ দিয়ে ঘোরা মিনি বাসে চেটে সপরিবারে ঘোরা। এর মজাটাই যেনো আলাদা। ভিন্ন স্বাদের ভ্রমণ। শিশু সন্তানসহ সকলের জ্ঞানকোষের সমৃদ্ধিতা অর্জন। এসব প্রেসক্লাব সদস্যদের অনেক দিনের প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা, এ প্রয়াস পুরণে পাশে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের অন্যতম দাতাসদস্য ডায়মন্ড ওয়াল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলিক কুমার আগরওলা। সশরীরে না হলেও তিনি ভাসুয়ালভাবে আনন্দ সফলে অংশ নিয়ে বলেন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্যদের সপরিবারে আনন্দময় ভ্রমণ সারা দেশের জন্যই অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত।

ভ্রমণে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

গত শুক্রবার বিকেল সোয়া ৩টায় বেনাপোল এক্সপ্রেসের বরাদ্দকৃত কামরায় চেপে প্রেসক্লাব সদস্যরা সপরিবারে যাত্রা শুরু করেন। জয়দেবপুর স্টেশনে ট্রেনটি না থামলেও কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদনে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ থেমে আনন্দভ্রমণকারীদের অবতরণের সুযোগ করে দেন ট্রেনটির পরিচালক। সেখানে পূর্ব থেকেই অপেক্ষায় ছিলো দুটি বাস। বাসযোগে শালবোনের সরু থমথমে সড়ক মাড়িয়ে রাত পৌনে ১০টা নাগাদ পৌছয় সাহেব বাড়ি নামের অবকাশ যাপনের বিশাল ভবনসহ পুকুরপাড়ের ছোট ছোট ঘরগুলোতে। এটাও একটা পার্ক। রাতের খবার শেরে শীতাতপ নিয়োন্ত্রিত ঘরে রাতযাপন। ভোর হতে না হতেই কেউ সাজলেন হিমু, কেউ হলেন হিমি। সুইমিং পুলে নেমে শুধু কি সাতারা? বল নিয়ে মাতামাতির পাশাপাশি শিশুদের সাতার শেখানো হলে দীর্ঘ সময় ধরে। সকালের নাস্তা সেরে ১১টার দিকে বাসযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। এ পার্কে? ভিড়ের মাঝে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্যদের ঘোরানোর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো বনে ঘোরা বিশেষ বাস। বাসে চেপে জিরাফ, জেবরা, ভুল্লক, সাদা শিংহ, শাদা বাঘা, ডোরা কাটা বাঘসহ ভয়ানক প্রাণীদের আস্তানায় যখন? তখন ভ্রমণকারীরা যেনো বাসে বন্দি। বন্যপ্রাণীগুলো ঘুরছে বনে। যদিও ডোরাকাটা বাঘ মামা ছিলো আয়েশি কায়দায় শুয়ে। সিংহ? বসে বসে ঘুরাছিলো ঘাড়। নাড়ছিলো কান। এসব দেখে সকলকে নেয়া হলো পাখি শালা। পাখি আর পাখি। ইয়া বড় বড় কাকাতোয়া, হরেক রকমের টিয়া। পাশেই মাছ রাখা একুরিয়াম। তার পর প্রজাপতির বাগান। অপর প্রান্তে ময়ূর, কুমিরসহ অনেক কিছু দেখার পালা। তখন খাখা দুপুর। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আনন্দভ্রমণে যোগ দিতে না পারা সদস্যদের স্মরণ। পাশেই পার্কের ঐরাবতি বিশ্রামাগার।

সাফারি পার্কের বিশ্রামাগারে সাংবাদিক পত্মিনের খোশ গল্প

সেখানে দেশের শীর্ষ বন কর্মকর্তার বিশেষ আতিথিয়তায় প্রেসক্লাব সদস্যরা সপরিবারে সিক্ত হন। দেশের শীর্ষ বন কর্তা আমির হোসেন চৌধুরী চুয়াডাঙ্গারই কৃতি সন্তান। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্যরা যখন তারই অধিনস্থ একটি পার্কে তখন তিনি পার্কে কর্মরতদের মাধ্যমে বিশেষ আতিথীয়তার আয়োজন করে সকলকে মুগ্ধ করেন। বিশেষ করে সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান ও বন পরিদর্শক হারুন অর রশিদের সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। আপ্যায়িতর পর পার্কে থেকে বের হয়ে পার্কের সামনেই চড়ুইভাতির স্থানে সকলের যোগদান। দুপুরে কবজি ডুবিয়ে ভড়িভোজ। গাজীপুর এলাকার বিশেষ মাছ বাউশির বড় বড় পেটি সকলে পাতে পেয়ে খাওয়ার আগেই যেনো তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। তখনও ভার্সুয়ালভাবে সংযুক্ত ছিলেন ভ্রমণ সহায়ক দিলিপ কুমার। তিনি নূহাশ পল্লিটাও ঘুরে দেখার আহ্বান জানান। এ আহ্বনের অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। আহ্বান জানানোর সাথে সাথে করতালিতে ভরে উঠলো চড়–ইভাতির ছাউনি। বিকেলে বাসযোগে ছোটা হয় সেখানে। শালবনের মাঝে গড়ে তোলা পল্লিতে ঢুকে কেউ করলেন লেখক প্রায়ত হুমায়ুন আহমেদের কবরস্থান জিয়ারত, কেউ ছুটলেন তার রেখে যাওয়া পদ্মদীঘীপাড়ে। সেতপাথরের শিড়ি আর পাশের পাতা শূন্য গাছের নিচে ছবি ওঠার হিড়িক। বৃষ্টি বিলাশের সামনেও সকলে সময় কাটান

নুহাশ পল্লী

কিছুক্ষণ। তবে স্থানটির প্রতি ভাঁজেই অযতœ অবহেলার নিদর্শন দেখে দীর্ঘশ^াস ছাড়েন প্রায় সকলে। সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে নূহাশ পল্লি ছেড়ে ফেরা হলো সেই সাহেব বাড়ি রিসোর্টে। বিশ্রাম নিয়ে রাত ১০টায় আবারও জয়দেবপুর স্টেশনের উদ্দেশে রওনা। স্টেশনে অতোগুলো যাত্রী বেনাপোল এক্সপ্রেসে যাবে বলে শুনেই উপস্থিত সকলের চোখ যেনো চড়ক গাছ। কেউ কেউ হেসেই কুটি কুটি। জয়দেবপুর স্টেশনে বেনাপোল এক্সপ্রেস আবার থামে নাকি? যখন শুনলেন ফেরার ট্রেনেরও কামরা বরাদ্দ নিয়ে জয়দেবপুর স্টেশনে ওই ট্রেন থামানোর বিশেষ অনুমোদন নেয়া হয়েছে তখন থামলে তাদের বাঁকা চোখের চাহনি। স্টেশনে মশা আর মশা। তার পর আবার ট্রেনটির প্রায় ১ ঘণ্টা বিলম্ব। পৌনে ১টার দিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস থামলো। আনন্দভ্রমণকারীরা ট্রেনে উঠলেন। ট্রেন ছাড়লো। রাতের খাবার খেয়ে ট্রেনেই শুরু হলো র‌্যাফেল ড্র। এবারের এ খেলা ছিলো আরো মজাদার। কাচের বয়মে চিরকুটে লেখা পুরষ্কার নিজেরই ওঠিয়ে নিলেন। কেউ পেলেন টেবিল ভ্যান, কেউ পেলেন কাঁচের বাটি, হটপটসহ গায়ে মাখা সুগন্ধি। ট্রেনের কামরা বরাদ্দ নেয়াসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের ভ্রমণ উপভোগ্য করতে সর্বাত্মক সহযোগিতায় যিনি ছিলেন তিনিও চুয়াডাঙ্গারই সন্তান। রেলওয়ের উপ পরিচালক ( ট্রাফিক- কর্মাশিয়াল) নাহিদ হাসান খান নিপু।

ফেরার পর সভাপতির শুকরিয়া আদায়

রোববার সকালে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে আনন্দভ্রমণকারীরা অবতরণ করে বাড়ি ফেরেন। সুন্দরভাবে ভ্রমণ সম্পন্ন হওয়ায় সহযোগি সকলকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রাজিব হাসান কচির সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং আনন্দভ্রমণ উপলক্ষে গঠিত একাধীক উপকমিটির নেতৃবৃন্দ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে স্থাপন করেন অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি কামাল উদ্দীন জোয়ার্দ্দার, সহ সধাারণ সম্পাদক ইসলাম রাকিব, অর্থ সম্পাদক আতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, সহ সাধারণ সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ আনন্দভ্রমণকে সর্বাত্ম সফল করার জন্য নিবেদিত ছিলেন। আয়োজনকে পূর্ণতা দিতে নেচে গেয়ে যারা আনন্দের ছটা ছড়িয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন নাজমুল হক স্বপন, আহাদ আলী মোল্লা, রফিক রহমান, আব্দুস সালাম, খায়রুজ্জামান সেতু, জহির রায়হান সোহাগ, রানা কাদীর, মফিজুর রহমান জোয়ার্দ্দার, জামান আখতার, মাফুজ মামুন, আলমগীর কবির শিপলু, মশিউর রহমান, হুচাইন মালিক, উজ্জ্বল মাসুদ, খয়রুল ইসলাম, আনজাম খালেক, শামীম রেজা, পলাশ উদ্দীন, সঞ্জিত কর্মকারসহ অনেকে।

ভুড়িভোজ
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More