স্টাফ রিপোর্টার: কাশিমপুর কারাগারে লেখক মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে দিনভর বিক্ষোভ কর্মসূচির পর সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের কয়েক জন আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ৬টায় আন্দোলনকারীরা মশাল মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যান। পথে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে পুলিশ বাধা দিলে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এদিকে হামলার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দফায় দফায় মিছিল করে আন্দোলকারীরা। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের তিন জন আহত হয় ও বেশ কয়েক জনকে আটক করে পুলিশ। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ১০-১২ জন আহত হয় বলে জানানো হয়।
হামলার বিষয়ে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক আল কাদেরী জয় বলেন, আমরা যখন পাবলিক লাইব্রেরির সামনে যাই, তখন পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় নারী কর্মীদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার জানান, হামলার প্রতিবাদে ও মৃত্যুর বিচারের দাবিতে আজ ১২টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল করবেন আন্দোলনকারীরা।
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, পুলিশ তাদের ওপরে হামলা করেনি। আন্দোলনকারীদের হামলায় পুলিশের ১০ থেকে ১২ জন সদস্য আহত হয়েছে। আন্দোলনকারীদের নিক্ষেপ করা ইটপাটকেলে তিনি নিজেই আহত হয়েছেন।
কাশিমপুর কারাগারে বৃহস্পতিবার রাতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করেছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো। তারা ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবি জানান। সেখান থেকে ঘোষণা আসে, সকালের বিক্ষোভ কর্মসূচির। গতকাল শুক্রবার দিনভর রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়েছে। বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হকের সংগঠন এসব কর্মসূচি পালন করে। বেলা ৩টায় শাহবাগে মুশতাকের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দিনের কর্মসূচির পর সন্ধ্যায় ‘মুশতাকের হত্যার প্রতিবাদে’ মশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়।
সকাল ১০টা থেকে শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে প্রগতিশীল ছাত্র জোটসহ সহযোগী সংগঠনগুলো। বিক্ষোভে ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, করোনার ১১ মাসে দেশে যে মহালুটপাট ও দুর্নীতি হয়েছিলো তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন লেখক মুশতাক। এই সরকার এতোই অসহিষ্ণু, তার মসনদ এতই দুর্বল যে, এই ন্যূনতম সমালোচনাও সহ্য করতে পারেনি। এ সরকারের বিরুদ্ধে যেই সমালোচনা করবে তাকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ঠেলে দেয়া হয়। রাষ্ট্রীয় দমন-নিপীড়নের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে লেখক মুশতাক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রিন্স আরও বলেন, ‘আজ কার্টুনিস্ট কিশোরও অসুস্থ অবস্থায় টানা ৯ মাস কারাগারে আছেন। সরকারের এ ধরনের কর্মকা-ের ধিক্কার জানাই এবং সেসঙ্গে ফ্যাসিবাদি? ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলি।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয় বলেন, ‘যে সমাজে কথা বলার মতো কেউ থাকে না, সে সমাজের মেরুদ- ভেঙে যায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে মেরুদ- ভাঙার সে আয়োজন চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় লেখক মুশতাক হত্যাকা-।’
ফ্রন্টের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজীব কান্তি রায় বলেন, ‘এটা কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়। এটা একটা রাষ্ট্রীয় খুন। এর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সরকার একটা ভীতি তৈরি করতে চায়। কিন্তু আমরা সরকারের এই চেষ্টা সফল হতে দেব না।’
ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, ‘এই হত্যায় আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আপনার কথা বলার অধিকার যদি কেড়ে নেয়া হয়, তাহলে আপনি যে মানুষ সেটাও অস্বীকার করা হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মানুষ বন্দি রয়েছে। আর কতো! আর কতো মানুষ মরলে আমরা জাগব’।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘আজ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই বললে চলে। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি রাষ্ট্র এই লেখককে হত্যা করেছে। তার দোষ ছিল সে যুক্তিক বিষয়ে লেখালেখি করত। এভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনে আর কত মানুষকে হত্যা করা হবে, গ্রেফতার করা হবে! ’
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ