স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষ ও চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। টানা দ্বিতীয় দিনে চলা আন্দোলনের মুখে বুধবার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় ঢাবি প্রশাসন। তবে পরীক্ষা হলেও কলেজগুলোর আবাসিক হল না খোলার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে চরম দুর্ভোগে পরে সাধারণ মানুষ।
এর আগে মঙ্গলবার জরুরি সভায় সাত কলেজের চলমান সব পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এ খবর শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে ওইদিন রাতেই নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বুধবার সকাল ৯টা থেকে আবারও নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে নীলক্ষেত মোড় ও সায়েন্স ল্যাব এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দুপুরে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য ও সাত কলেজের অধ্যক্ষরা ওই ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন।
সভা শেষে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের চলমান পরীক্ষা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে এক জরুরি সভায় স্থগিত পরীক্ষা চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আর বিকেল পৌনে ৪টার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এলে সড়কে অবস্থান নিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এ সময় আনন্দ মিছিলের মাধ্যমে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পরপরই কলেজগুলোর তৃতীয় বর্ষ ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত আলাদা দুটি বিজ্ঞপ্তিতে এ রুটিন প্রকাশ করা হয়। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা ২৮ ফেব্রুয়ারি, ৩, ৬, ৯, ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২, ৪ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা প্রতিদিন সকাল ৯টায় আরম্ভ হবে। সময়কালের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত সময়কাল।
ঢাবির পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তের পরপরই রাজপথে নেমে পরে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অল্পসংখ্যক থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। একে একে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে আসতে থাকে নীলক্ষেত মোড়ে। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের তুলে দিতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে জলকামান নিয়ে এগিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত না হয়ে পুলিশকে ঘিরে ধরে ও উপস্থিত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে একটি করে লাল গোলাপ দেয়। এ সময় পুলিশও ফুলের শুভেচ্ছা গ্রহণ করে থেমে যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইসমাইল সম্রাট বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের পরীক্ষা চলছিল। সকাল ৯টায় আমাদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার টেবিলে শুনি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। হঠাৎ এ ধরনের ঘোষণায় আমরা বিপাকে পড়েছি। আমাদের অনেকেই পরীক্ষা চলবে এমন ঘোষণায় বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে আসে। তাদের বাসা নেয়া, ফরম পূরণ এবং ভর্তি হওয়া পর্যন্ত বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
আন্দোলনের মধ্যে অনশনে বসেন সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী মো. ওমর ফারুক। তিনি স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের কারণে আজ আমাদের একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। আমাদের মাত্র একটি পরীক্ষা ছিল, কিন্তু তার সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেল। তবে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পর তিনি মোড় থেকে উঠে পড়েন।
শিক্ষার্থীদের টানা অবরোধের কারণে রাজধানীজুড়েই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, নীলক্ষেত মোড়টি রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের একটি। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করার কারণে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। জনদুর্ভোগও প্রকট হয়ে ওঠে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ