স্টাফ রিপোর্টার: মাঝে মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের বাজার। পণ্যের আকস্মিক লাগামহীন মূল্যে ক্রেতাও দিশেহারা হয়ে পড়ছে। বাজারের এই অস্থিরতা দূর করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ১৫টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিতে কমিটি করা হয়েছে। পণ্যের আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণে এ কমিটি একটি কাঠামো দাঁড় করাবে।
ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের এ কমিটি কাজও শুরু করেছে। সরকার যেসব পণ্যের দাম বেঁধে দিতে চাচ্ছে সেগুলো হচ্ছে ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা ও তেজাপাতা। তবে এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে সরকার কতটা সফল হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্নও রয়েছে।
এ বিষয়ে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ পদ্ধতি প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে বাজারে পণ্যের দাম যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সে প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ আকারে পাঠানো হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।
জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম কীভাবে বেঁধে দেয়া সম্ভব তা বুঝতে পারছি না। এর পরও যদি করা হয় তাতেও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, নতুন আইন-কানুন করে লাভ হবে না। এর পরিবর্তে পণ্যের সঠিক চাহিদা নির্ধারণ করে আমদানি করতে হবে। পাশাপাশি আমদানিকারকদের উৎসাহ দিতে হবে।
তবেই পণ্যের দাম নাগালে থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ের বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে সয়াবিন তেলের বাজারে অস্থিরতা। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা দোহাই দিয়ে স্থানীয় বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে সয়াবিন তেলের দাম। যে কারণে ১৪০ টাকা লিটারেও সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাকে। চিনির দাম এখন ৬৫-৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম নির্ধারণের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নজরদারির জন্য এটা ভালো উদ্যোগ। একটা বেঞ্চমার্ক থাকা দরকার। তিনি আরও বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সবার আগে নিত্যপণ্যের চাহিদা সঠিকভাবে নিরূপণ করতে হবে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতর নিজেদের সফলতা দেখাতে উৎপাদিত পণ্যের বা মজুদের পরিসংখ্যানে কারসাজি করে বলে অভিযোগ আছে। এ কারণে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য মতে, গত এক মাসের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। খোলা ও প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ছয় টাকা, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা, মসুরের ডাল কেজিতে ১০ টাকা, দেশি রসুন কেজিতে ২০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২০ টাকা, দেশি শুকনা মরিচ কেজিতে ৮০ টাকা, আমদানি করা শুকনা মরিচ ২০ টাকা, হলুদ কেজিতে ১০ টাকা, তেজপাতা ৪০ টাকা বেড়েছে।
জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ট্যারিফ কমিশনের সভাকক্ষে জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটির সভা হয়। ওই সভায় নিত্যপণ্যের আমদানিকারক, উৎপাদক, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, পাইকারি ব্যবসায়ী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, কৃষি বিপণন অধিদফতর, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ওই সভায়ই দাম নির্ধারণে কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে শুল্ক-কর, মিলিং খরচ, প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ, প্যাকেটজাত খরচ, পরিবহণ খরচ, উৎপাদক ও আমদানিকারকের মুনাফা, পাইকারি বিক্রেতার মুনাফা বা কমিশন ও খুচর বিক্রেতার তুনাফা পর্যালোচনা করে খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করবে। ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ