স্টাফ রিপোর্টার: ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা আগামীকাল বৃহস্পতিবার আসছে। করোনাভাইরাসের টিকার চালান হাতে পাওয়ার পর প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। টিকা পাওয়ার পর তা পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়া হবে। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা কর্মীরাই আগে টিকা পাবেন, ‘ভিভিআইপি’দের জন্য এখানে কোনো অগ্রাধিকার নেই। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরে ভারত থেকে আসা টিকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি, আমাদের যে শিডিউল আছে সেই অনুযায়ী আসবে। আগামীকালের (বুধবার) একটা শিডিউল আছে। অথবা পরশুদিন (আজ) আসবে। এটাই সর্বশেষ খবর। ভারত এই টিকা আমাদের কাছে পৌঁছে দেবে। আমি বিমানবন্দরে গিয়ে টিকা গ্রহণ করবো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা প্রয়োগ করে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথমে ইউনিয়ন পর্যায়ে দেয়া হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই টিকা নিচ্ছেন-বাংলাদেশে এমন হবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আপাতত এ ধরনের চিন্তা নেই। আমরা চিন্তাভাবনা করছি যাদের সবচেয়ে আগে প্রয়োজন, ফ্রন্টলাইনার, তাদের আগে দেবো। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ প্রথমে পাবেন। সাংবাদিকদেরও দেয়া হবে। যেটা প্ল্যান করা আছে সেভাবেই হবে। ভিভিআইপিরা আগে পাবেন না।
এখন ভারতের উপহারের টিকা আগে চলে এলে সময়সূচিতে পরিবর্তন আসবে কিনা জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, টিকা আগে চলে এলে প্রয়োগও আগে হবে। যেটা আমাদের ভারত সরকার দিচ্ছে সেটা যদি আগে পেয়ে যাই, তাহলে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা আগেই শুরু করবো। সারা দেশে পৌঁছুতে কিছুটা সময় লাগবে। সব জায়গায় পৌঁছালে আমরা সারা দেশে একযোগে কাজ শুরু করবো। শুরু হবে ঢাকা থেকে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, জেলা পর্যায়ে চারটি, উপজেলায় দুটি এবং মেডিকেল কলেজে ছয়টি দল টিকা দেয়ার কাজ করবে। কয়েকটি দল কাজ করবে বিভিন্ন হাসপাতাল এবং সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। প্রায় ২৮ হাজার ভলান্টিয়ার এই কাজে যুক্ত থাকবেন। প্রাথমিকভাবে আমরা ইউনিয়নগুলো বাদ দেবো। শুধু জেলা, উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন এলাকা হিসাব করে প্রতিদিন আনুমানিক ২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারত থেকে টিকা আসার পর তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিএমএসডি, ইপিআই এবং তেজগাঁও হেলথ কমপ্লেক্সের কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হবে। সরকারের কেনা ৩ কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর সব জেলায় একসঙ্গে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের কিছু টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এক সপ্তাহ পর সব জেলায় শুরু করা হবে। এটাই আমাদের পরিকল্পনা। টিকা প্রয়োগের বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই সব চূড়ান্ত হবে। ভারতের উপহার ২০ লাখ ডোজ টিকা কখন কাকে দেয়া হবে জানতে চাইলে খুরশীদ আলম বলেন, মন্ত্রণালয় আমাদের যেভাবে জানাবে, সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেজন্য আগামী ২৬শে জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু করার কথা রয়েছে। এর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ টিকার জন্য তৈরি করা অ্যাপস ২৫ জানুয়ারির মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করবে।
এর আগে গত ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে দেশের শীর্ষ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনা হবে সেটি দেশে আসছে ২১ থেকে ২৫শে জানুয়ারির মধ্যে। আর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে। সেজন্য আগামী ২৬শে জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে অনলাইনে নিবন্ধন। ১৮ই জানুয়ারি ডিআরইউতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান দেশে আসবে ২৫ থেকে ২৬ জানুয়ারি। তার আগেই আগামীকাল দেশে পৌঁছাবে ২০ লাখ ডোজ টিকা, যা ভারত সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে পাঠাচ্ছে। সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার এই ২০ লাখ ডোজ সরকারের কেনা তিন কোটি ডোজের অতিরিক্ত।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ