স্টাফ রিপোর্টার: পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি আজ বসার কথা রয়েছে। ৪১তম এ স্প্যানটি বসানোর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এটি ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর স্থাপন করা হবে। এর মধ্যদিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে।
এরপর সড়ক ও রেল সø্যাব বসানোর কাজ শেষ হলে এ সেতুতে গাড়ি ও ট্রেন চলাচল করবে। তবে এজন্য অন্তত এক বছর বা এর বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে দেশবাসীকে। পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করছি আজ বৃহস্পতিবার স্প্যানটি স্থাপন করা হবে। এ স্প্যানটি স্থাপনে দেশবাসীর মতো আমরাও অধীর আগ্রহে আছি।
সেতু সূত্রে জানা গেছে, মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে স্প্যানটি প্রস্তুত করা হয়। গতকাল বুধবারই ভাসমান ক্রেন দিয়ে এ স্প্যানটি পিলারের কাছাকাছি নিয়ে রাখা হয়েছে। আজ কুয়াশার প্রকোপ বেশি না হলে দুপুরের আগেই তা স্থাপনের চেষ্টা করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাতে কুয়াশার ঘনত্ব বেশি হলেও দিনে তা কমে যাবে বা থাকবে না। ফলে হালকা কুয়াশা থাকলেও স্প্যানটি বসাতে বেগ পেতে হবে না। এ স্প্যানটি স্থাপনের পর সড়ক ও রেলওয়ের সø্যাব বসানোর গতি আরও বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনার মধ্যেও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজ শেষ হয়েছে ৯১ শতাংশ। সার্বিকভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাকি অংশ নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা রয়েছে। যদিও মহামারীর প্রভাবসহ নানা কারণে ওই সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০২২ সালের মার্চে গাড়ি চলাচল শুরুর জন্য খুলে দেয়ার পরিকল্পনা আছে সেতু কর্তৃপক্ষের।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, দোতলা আকৃতির পদ্মা সেতুতে একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে। রেল ও গাড়ি চলাচলের রাস্তা নির্মাণের অংশ হিসেবে পৃথকভাবে সø্যাব বসানোর কাজ জোর গতিতে এগিয়ে চলছে।
দোতলা আকৃতির সেতুর নিচের অংশে রেলওয়ে সø্যাব ও ওপরের অংশে রোডওয়ে সø্যাব বসানো হচ্ছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে সø্যাবের মধ্যে ১ হাজার ২৬১টি বসানো হয়েছে; যা শতকরা ৪৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ সø্যাবের ওপর পিচঢালা রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
একই সময়ে সেতুর নিচের অংশে ২ হাজার ৯৫৯টি সø্যাবের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৮টি স্থাপন করা হয়েছে, যা শতকরা ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর ওপর ট্রেন লাইন বসানো হবে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপারটি গার্ডারের মধ্যে ৩০৩টি স্থাপন করা হয়েছে।
তবে পদ্মা সেতুর তুলনায় নদীশাসনের কাজ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক নদী ভাঙনে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবুও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নদীশাসনের কাজ এগিয়েছে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। মাওয়া ও জাজিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ আগেই শেষ হয়েছে।
মূল পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। নভেম্বর পর্যন্ত সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৭২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
এ হিসাবে আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যদিও সেতু নির্মাণে বাস্তব অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। অপরদিকে নদীশাসনের কাজ করছে চীনের সাইনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড। নদী শাসনকাজে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়েছে ৫ হাজার ৬৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
মূল সেতু, নদীশাসন, সড়ক নির্মাণসহ সবমিলিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ব্যয় ধরা আছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ কোটি ২ লাখ টাকা।
পূর্ববর্তী পোস্ট
সরকারের দেয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীদের মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ