সরকারের দেয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীদের মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে
চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তরা
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: ‘কমলা রঙের বিশ্বে নারী, বাধার পথ দেবেই পাড়ি’ সেøাগানকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেরা দিবস। এ উপলক্ষে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় জয়িতাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতর দিবসটি পালন করে। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনিরা পারভিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু তারেক। মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাকসুরা জান্নাতের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপরিচালক দীপক কুমার সাহা, সমাজ সেবা অধিদফতরের উপপরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্পাদিকা নুরুন্নাহার কাকলী, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের কর্মকর্তা ইল্লিন সুলতানা, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাবিলা রোকসানা, খুলনা বিভাগীয় জয়িতা সুপিয়া খাতুন, জেলা পর্যায়ের জয়িতা রোজিনা ইয়াসমিন, রিসো’র প্রকল্প সমন্বয়কারী আদিল হোসেন, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহাজাদী মিলি, ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী ফারুক আহাম্মেদ, পল্লী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইলিয়াস হোসেন। বক্তাগণ বলেন, আমাদের দেশের অভিভাবকগণ মেয়েদের বোঝা মনে করে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। অল্প বয়সী মেয়েটি স্বামীর সংসারে যেয়ে সবাইকে মানিয়ে নিতে পারে না। ফলে তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। কিছুদিন যেতে না যেতেই একটি সন্তান নিয়ে আবার পিতারবাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। নিজের পিতারবাড়িতে এসেও পিতা-মাতা, ভাই-ভাবীর মানষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অবশেষে বাধ্য হয় আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিতে। নারী জাতিকে শিক্ষিত করে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা ও নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য নারী জাগরণের অগ্রদূত ও মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। তার এ সকল কাজে সহযোগিতা করেছিলেন তার স্বামী। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নারীদের উন্নয়নে ও নারীদের উদ্যোক্ত্যা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে সুদ মুক্তঋণ প্রদান করছেন। এজন্য নারীদের ঘরের মধ্যে আটকে না রেখে সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নারীদের মানব সম্পদে পরিণত করতে হবে। শেষে পরিবারে ও সমাজে বিভিন্ন কাজে সফলতার জন্য জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জন করায় রোজিনা আক্তার, সফল জননী নারী জাহানারা পারভিন, সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য নাবিলা রোকসানা, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুনভাবে জীবন গড়ায় সালমা খাতুন, চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সফলতার জন্য রোজিনা ইয়াসমিন এবং উপজেলা পর্যায়ে রোজিনা খাতুন, সাজেদা খাতুন, বিপাশা খানম শিল্পী, রোজিনা আকতার ও নাবিলা রোকসানাকে জয়িতা নির্বাচিত করে সংবর্ধনা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোতিা করেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের অফিস সহকারী আলম আলী ও মাহাবুব হোসেন।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদায় আন্তজার্তিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ, বেগম রোকেয়া দিবস ও জয়িতাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আলোচনাসভা ও নির্বাচিত জয়িতাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনাসভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হোসনে জাহান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মতিন, তথ্য সেবা অফিসার তথ্য আপা ওজিফা রহমান ও দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম নুরুন্নবী। আলোচনাসভায় সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেগম রোকেয়ার জীবনী নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত জয়িতা, পার-দামুড়হুদার রহমতুল্লার স্ত্রী মোছা. মুক্তি খাতুন, কেশবপুর গ্রামের ঈমান আলীর মেয়ে শাহানাজ খাতুন, দামুড়হুদার মৃত খাদেম হোসেনের স্ত্রী জাহানারা পারভীন, মোক্তারপুর গ্রামের মৃত নবী ছদ্দীনের স্ত্রী মোছা. নুরুন্নাহার খাতুন ওরফে নুরজাহান, উজিরপুর গ্রামের তাহাজ্জেত আলীর মেয়ে মোছা. পদ্ম খাতুনকে সংবর্ধনা দেন। এর আগে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আন্তজার্তিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, আলোচনাসভা ও জয়িতাদের মধ্যে পুরস্কার প্রদানের মধ্যদিয়ে মেহেরপুরে বেগম রোকেয়া দিবস ও আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনাসভা ও জয়িতাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানের সভাপতিত্বে বেগম রোকেয়া দিবসের আলোচনাসভায় জুমের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাসিমা আক্তার, মেহেরপুর জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার সভানেত্রী শামীম আরা হীরা, জয়িতা দিলারা খাতুন প্রমুখ। এ সময় জুমের মাধ্যমে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি। পরে মেহেরপুরের ৫জন জয়িতাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবারের জয়তিারা হলেন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যে তানিয়া পারভীন, নির্যাতনের বিভীষিকাময় মুহূর্ত মুছে ফেলে নতুন উদ্যেমে জীবন শুরু করায় রাফিজা খাতুন, সেরা জননী হিসেবে ফরিদা পারভীন, সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে দিলারা খাতুন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে আফরোজা আক্তারকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বেগম রোকেয়া দিবস ও আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালনে মেহেরপুর গাংনীতে র্যালি ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য গাঁথা পাঁচ জয়িতাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে র্যালি শেষে ইউএনও’র সভাকক্ষে আলাচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের গাংনীর প্রশিক্ষক নার্গিস সুলতানা। বক্তব্য রাখেন গাংনী প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম, জেপি মেহেরপুর জেলা সভাপতি আব্দুল হালিমসহ নারী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেয়া জয়িতাদের মধ্যে-অর্থনীতিতে সাফল্য অর্জনকারী মহিলা কলেজপাড়ার বেকারি মালিক তানিয়া খাতুন, শিক্ষাক্ষেত্রে গাড়াডোব গ্রামের হাসিনা বেগম, সফল জননী নারী বাদিয়াপাড়া গ্রামের ফরিদা পারভীন, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে সাফল্য অর্জনকারী হিজলবাড়িয়া গ্রামের রাফিজা খাতুন ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানকারী চৌগাছা গ্রামের হুসনেআরা।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছেন, ‘কমলা রঙের বিশ্বে নারী, বাধার পথ দেবেই পাড়ি’ এ সেøাগানকে সামনে রেখে ঝিনাইদহে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আয়োজনে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জয়িতা সম্মাননা ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য খালেদা খানম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক নিলুফার রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আরিফ-উজ-জামান, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আরতী দত্ত। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের প্রোগ্রাম অফিসার খোন্দকার শরীফা আক্তার। আলোচনাসভা শেষে শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সফলতা, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যেমে জীবন শুরু করা, সমাজ উন্নয়ন অসামান্য অবদান রাখায় ১০ নারীকে জয়িতা সম্মাননা প্রদান করা হয়।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মহেশপুর উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আয়োজনে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে শ্রেষ্ঠ জয়িতা’র সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাশ্বতী শীলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামীদ। বিশেষ অতথি ছিলেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আকবর নেওয়াজ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ অর্থনৈতিকভাবে, শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নুতন উদ্যোগে জীবন পরিচালনায়, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা প্রদান করা হয়।