প্রাথমিকে অনির্দিষ্ট সংখ্যক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ : চুয়াডাঙ্গায় ৪৪৫ বিদ্যালয়ে শূন্যপদের সংখ্যা ৫৪টি
নজরুল ইসলাম: দেশ স্বাধীনের পর সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে নজর বাড়ায়। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, সমাজ ও দেশ গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে তৎকালীন সরকার ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করে এবং পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। সরকার ৩৬ হাজার ৬৬৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করে যুগান্তকারী ভূমিকা নেয়। যার মূল লক্ষ্য ছিলো বিদ্যালয়ে শিশুদের ভর্তি হার বৃদ্ধি, শিক্ষায় ছেলে-মেয়ের সমঅধিকার ও গুণগত মান বৃদ্ধি। দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকের পদ শূণ্য থাকায় শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে থাকে। তাই দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আবেদনের সময়সীমা শেষও হয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গার ৪৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে ৫৪টি। এর মধ্যে কেউ কেউ আবেদন করে বাঁকা পথে হাটতে শুরু করেছে। আর এসব খদ্দের ধরতে ওৎ পেতে বসে আছে প্রতারকচক্র। মেধার ভিত্তিতে এসব পদ পূরণ করা হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। ভিন্নপথে হেটে প্রতারণার শিকার হলে এর দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে বলে সচেতন মহল মনে করছে।
শিক্ষাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বর্তমান সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তাই এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ রেখেছে মোট ব্যয়ের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ০৯ শতাংশ। প্রতিটি বিদ্যালয়ে এসব বাস্তবায়ন হয়ে থাকে একজন প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে কয়েকজন সহকারী শিক্ষকের সমন্বয়ে। দেশের বিপুল সংখ্যক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদশূন্য থাকায় লেখাপড়ার মান বিঘিœত হচ্ছে। বিষয়টি উপলব্ধি করে সরকারের প্রাথমিক অধিদফতর শূন্যপদ পূরণের লক্ষে গত ১৯ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২৪ নভেম্বর আবেদন নেয়ার শেষ দিনে যোগ্যতাসম্পন্ন বেকার ছেলে মেয়েরা আবেদন করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কতজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে তার নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ না থাকায় আবেদনকারীরা আবেদন করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ আছে জেলার সব শূণ্যপদ পূরণ করা হবে। সে হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪৪৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র পদশূন্য আছে ৫৪টি। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৮টি, আলমডাঙ্গায় ১৩টি, দামুড়হুদায় ৩টি ও জীবননগর উপজেলায় ২০টি। আবেদনকারীদের সতর্ক থাকতে হবে যে, উপজেলার বাসিন্দা সে উপজেলার শূণ্যপদের চাইতে একটিও বেশি শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হবে না। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ২২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫০ হাজার ৭০২ জন এবং ছাত্রী ৫২ হাজার ৩২০ জন। যাদেরকে ৩৫২ জন প্রধান শিক্ষক এবং ২ হাজার ৩৯৬ জন সহকারী শিক্ষক পাঠদান করিয়ে থাকেন। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে মেধাভিত্তিকেরাই যেনো সুযোগ পায় এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।
উল্লেখ্য, সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে আবারও ২০১৩ সালে ২৬ হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করে। যার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য লাভ করেছে অনেক ক্ষেত্রে। এই উন্নয়ন ধরে রাখতে জাতিসংঘ এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) ঘোষণা করে যার ৪ নম্বর অভিষ্টে রয়েছে গুণগত শিক্ষা। গুণগত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি, যে কোনো পরিবেশ খাপ খাওয়ানো কৌশল শিখিয়ে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো ও সঠিক শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা পাচ্ছে না, এমনটাই মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কিন্তু, কেন? প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা কম, শিশুদের পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর অভাব, শিক্ষকদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও ক্লাসে তা বাস্তবায়নের অনীহা, শিক্ষকদের সম্মান ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি, শিক্ষায় আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করতে না পারা, বিদ্যালয়ে পাঠাগার ও হাতে-কলমে শিক্ষার অভাব, দারিদ্র ও অভিভাবকদের আন্তরিকতার অভাবকে মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।