শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গায় সংরক্ষিত ১৩ সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৬ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো গতকাল মঙ্গলবার। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে চমক সৃষ্টিকারী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম দুজনই গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দুজনই জনপ্রিয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর। মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে দলীয় দ্বিধাবিভক্তিকে পাশে রেখে শেষ মুহূর্তে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দেন দুজনই। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার ঘটনাকে ছাপিয়ে এদিন শহরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলো মনোনয়নবঞ্চিত হেভিওয়েট ব্যক্তিরা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন কি-না, সে বিষয়। বর্তমান মেয়র জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েও এবার পাননি। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সবশেষ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তিনি। নৌকার বিরুদ্ধে মুঠোফোন প্রতীক নিয়ে সেবার জয়ী হয়েছিলেন তিনি। তাই এবার তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হন। সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারকে গত শনিবার নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রথম মনোনীত করেছিলো দলটি। ওইদিন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তার নাম চূড়ান্ত হয়। কিন্তু গত সোমবার হঠাৎ খবর আসে, তাকে বদলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে দলটি। রিয়াজুলের বিষয়ে শেষ মুহূর্তে কেন্দ্র জানতে পারে, রিয়াজুল ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। যদিও ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে দুজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন করার জন্য ছিলো তাদের অনুসারী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধ আর চাপও। পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার টেবিল হয়ে ওঠে সরগরম। কিন্তু শেষ সময় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাদের দুজনের কেউই মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় অনুসারীরা হতাশ হন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে মোট আটজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (আওয়ামী লীগ), জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম (বিএনপি), জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হক (স্বতন্ত্র), জেলা যুবলীগের সদস্য শরীফ হোসেন (স্বতন্ত্র), ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মনিবুল হাসান (স্বতন্ত্র), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তুষার ইমরান, সৈয়দ ফারুক আহমেদ (স্বতন্ত্র) ও তানভীর আহমেদ (স্বতন্ত্র)। বিকেলে রিয়াজুল দলের মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে তা পরীক্ষা করে দেখেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান ও দফতর সম্পাদক শওকত আলী, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন হেলা, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার উপস্থিত ছিলেন। গত সোমবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামের বিএনপি থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন নিশ্চিত হয়। তখন জেলা বিএনপির নেতারা বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে সর্বসম্মতিক্রমে যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হকের নাম মেয়র পদে সুপারিশ করেছিলেন তারা। যার নাম পাঠানো হয়নি, সেই সিরাজুল কীভাবে মনোনয়ন পেলেন, তা জানেন না তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের দায় কেন্দ্রের। স্থানীয় বিএনপি কেন্দ্রের ভুল সিদ্ধান্তের দায় নিতে পারে না। সিরাজুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে আলোচনায় আসে শরীফুজ্জামান শরীফের নাম। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরীফুজ্জামান সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন লাভ করেছিলেন। জেলা কমিটির সুপারিশের বাইরে থেকে সিরাজুলের মনোনয়ন পাওয়ায় শরীফুজ্জামানের ভূমিকা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় সিরাজুলের সঙ্গে শরীফুজ্জামানের পাশাপাশি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খোন্দকার আবদুল জব্বারসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। খোন্দকার আবদুল জব্বার ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তরুণ আইনজীবী সৈয়দ ফারুক আহমেদ এবার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ ফারুক আহমেদের মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে বড় বোন সৈয়দা জিন্না আরা শিলা এবং সমর্থক হিসেবে বাবা গিয়াস উদ্দিন আহমেদের নাম দেখা যায়।
এছাড়াও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে তিনটি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ২ নং ওয়ার্ডে ৩ জন ও ৩ নং ওয়ার্ডে ৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ২নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ৩নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ৪নং ওয়ার্ডে ৫ জন, ৫নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ৬নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ৭নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ৮নং ওয়ার্ডে ৬ জন এবং ৯নং ওয়ার্ডে ৮ জন। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছিলো মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৩ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১০ ডিসেম্বর। ১১ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়া তিন জনসহ মোট ৮ জন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মালিক, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মনি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত তুষার ইমরান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরীফ হোসেন দুদু, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক মজু, তানভীর আহমেদ মাসরিকী, সৈয়দ ফারুক উদ্দিন আহম্মেদ ও মনিবুল হাসান পলাশ। সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১৩ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, ১নং তথা ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে শাহিনা আক্তার, নাসরিন পারভিন, চাঁদনী খাতুন ও সুফিয়া খাতুন। ২নং তথা ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে বিলকিস নাহার, সুলতানা আঞ্জু ও হাসিমা খাতুন। ৩নং তথা ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে শাহানা খাতুন, মোমেনা খাতুন, জাহানারা খাতুন, শেফালী খাতুন, জাহানারা বেগম ও আন্না খাতুন। সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৬৬ জন। তাদের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম, বিল্লাল হোসেন বেল্টু, আব্দুল মালেক, আলমগীর হোসেন, মুনছুর আলী, জয়নাল আবেদীন, গোলজার হোসেন পিন্টু ও মোমিনুর রহমান। ২নং ওয়ার্ডে মুন্সী মো. রেজাউল করিম খোকন, কামরুজ্জামান বাবলু, মহিবুল ইসলাম, আলী হোসেন, খাইরুল হক, আব্দুল আজিজ জোয়ার্দ্দার, আবুল কালাম, আজিজুর রহমান ও আজম আলী মিলন। ৩নং ওয়ার্ডে নাজরিন পারভীন, আলমগীর হোসেন, জাহিদ হোসেন জুয়েল, জাহিদুল ইসলাম সোহেল, আমিরুল ইসলাম, মহলদার ইমরান ও শরিফ আহমেদ। ৪নং ওয়ার্ডে শেখ সেলিম, দেলোয়ার হোসেন দয়াল, ফজলে রাব্বি মুন্সী, তারিকুজ্জামান ও মাফিজুর রহমান। ৫নং ওয়ার্ডে নাজমুল হক মিন্টু, মুন্সী আলাউদ্দিন আহম্মেদ, গোলাম মস্তফা শেখ মাস্তার, সাইফুদ্দিন সবুর, আলম, আসাদুজ্জামান সবুজ, শাহীন উর রশিদ ও মিজানুর রহমান। ৬নং ওয়ার্ডে আব্দুল মান্নান জোয়ার্দ্দার, মোনাজাত শেখ, আজাদ আলী, আলামিন ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ফরজ আলী শেখ ও রাশেদুল হাসান। ৭নং ওয়ার্ডে উজ্জ্বল হোসেন, মজনুল হক, আবুল হোসেন, সুমন হোসেন, সাইফুল আরিফ বিশ্বাস, আশাবুল হক, জয়নাল আবেদীন ও খালিদ ম-ল। ৮নং ওয়ার্ডে ফিরোজ শেখ, মো. আহসান, শের আলী বিশ্বাস, টুটুল মোল্লা, সাইফুল ইসলাম ও আবু কাউসার বিশ্বাস। ৯নং ওয়ার্ডে সুমন আহমেদ, আলাউল ইসলাম, মফিজুর রহমান মনা, আমান উল্লাহ, ইব্রাহিম শেখ ইমরান, আতিয়ার রহমান জোয়ার্দ্দার, কামরুজ্জামান চাঁদ ও শহিদুল কদর জোয়ার্দ্দার। চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেমদ জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়ন জমাদানের শেষ সময়ে মেয়র পদে ৮জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৬ তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগামী ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। আগামী ১১ ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের ভোট আজ : ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে আনার নিদের্শনা
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ