প্রথম ধাপে আ.লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত : গত নির্বাচনে বিজয়ী দুই বিদ্রোহীসহ ২৫ পৌরসভায় বাদ পড়লেন ১১ মেয়র

চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে নৌকার মাঝি হলেন টোটন জোয়ার্দ্দার

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে দেশের ২৫টি পৌরসভায় দলীয় মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার বিকেলে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেয়র প্রার্থীদের নাম জানানো হয়। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে এবার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। গত নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট করেছেন, এবার তাদের সুযোগ দেয়া হবে না। এবারও যদি কেউ দলীয় মনোনয়ন ছাড়াই নির্বাচন করেন তবে তাকে সমর্থন দেয়া হবে না। উল্টো তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা হয়। এদিনের সভায় ২৫ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে নয়জন বর্তমান মেয়র এবার দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারও তারা দলের মনোনয়ন পাননি। এ ৯ পৌরসভায় নতুন মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তবে ১৪ জন বর্তমান মেয়রকে আবারও দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বাকি দুটি পৌরসভার মধ্যে একটিতে বর্তমানে বিএনপির মেয়র রয়েছেন। অন্যদিকে যিনি মেয়র, তিনি স্বতন্ত্র মেয়র। এ দুটিতেও দলের নেতাদের প্রার্থী করা হয়েছে।
সভায় দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নামের তালিকা এবং সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা/পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত রেজুলেশনে প্রস্তাবিত প্রার্থীর নামের তালিকা ধরে আলোচনা হয়। এ সময় বিগত নির্বাচনে যারা দলের প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করেছিলেন, তাদের কাউকে এবার নতুন করে মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, সভায় বিগত নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন, এমন এক প্রার্থীর নাম আলোচনায় আসে। তখন একাধিক নেতা বলেন, অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ধরে রাখতে যারা দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করেছেন, তারা ‘জনপ্রিয়’ হলেও এবার তাদের মনোনয়ন দেয়া যাবে না। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এতে সম্মতি দেন।
এছাড়া সভায় প্রথম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করার নির্দেশ দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা অতীতে পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাদের পরিবর্তন করে সাংগঠনিক রিপোর্টের ভিত্তিতে তুলনামূলকভাবে পরিছন্ন ও জনপ্রিয় ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এই সতর্কবাণীর মধ্যে যদি আসন্ন নির্বাচনে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে সভায় অনির্ধারিত আলোচনায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েবের প্রসঙ্গও উঠে আসে। সভায় শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কোডিডের দ্বিতীয় ওয়েভেও অতীতের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, নিজে সতর্ক থেকে অন্যকে সতর্ক করে তুলতে হবে। পাশাপাশি কোভিড ইস্যুতে কেউ যেন জনমনে ভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২৫ পৌর নির্বাচেন আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত তালিকা দেয়া হয়।
বাদ পড়েছেন যারা : রংপুরের বদরগঞ্জে বর্তমান মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি উত্তম কুমার সাহা। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন। তার পরিবর্তে এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম পৌরসভার বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের সাবেক পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল। তার পরিবর্তে এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাজিউল ইসলামকে।
পাবনার চাটমোহর পৌরসভায় গত নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মির্জা রেজাউল করিম দুলালকে এবারও দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সাখো। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বর্তমান মেয়র হালিমুল হক নিরুর পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা মনির আক্তার খান তরু লোদীকে। খুলনার দাকোপে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আল মাছুম মুর্শেদকে। বাদ পড়েছেন বর্তমান মেয়র তারিকুল ইসলাম তারিক। চুয়াডাঙ্গায়ও বাদ পড়েছেন বর্তমান মেয়র জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরী। এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার।
মানিকগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল হুদা সেলিম। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রমজান আলীকে। গত নির্বাচনেও দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। সুনামগঞ্জের দীরাইয়ে বাদ পড়েছেন বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া। এই পৌরসভায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিশ্বজিৎ রায়কে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে বর্তমান মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছালেক মিয়া বাদ পড়েছেন। তার জায়গায় এবার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র মো. মাসুদুউজ্জামান মাসুককে।
বর্তমান মেয়র যারা ফের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মো. কশিরুল আলম, রাজশাহী জেলার পুঠিয়ায় মো. রবিউল ইসলাম, কাটাখালী মো. আব্বাস আলী, খুলনা জেলার চালনায় সনত কুমার বিশ্বাস, বরগুনার বেতাগীতে এবিএম গোলাম কবির, পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আ. বারেক মোল্লা, বরিশালের উজিরপুরে মো. গিয়াস উদ্দিন বেপারী ও বাকেরগঞ্জে মো. লোকমান হোসেন ডাকুয়া, ঢাকার ধামরাইয়ে গোলাম কবির, গাজীপুরের শ্রীপুরে মো. আনিছুর রহমান, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এসএম ইকবাল হোসেন (সুমন), নেত্রকোনা মদনে মো. আব্দুল হান্নান তালুকদার, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম জেলার সীতাকু-ে বদিউল আলমকে আবারও দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এছাড়া পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদরে জাকিয়া খাতুনকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এই পৌরসভায় বর্তমান মেয়র বিএনপির মো. তৌহিদুল ইসলাম। অন্যদিকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার বর্তমান মেয়র (সতন্ত্র) মুর্তুজা সরকার মানিক। এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মো. খাজা মঈন উদ্দিনকে।
এদিনের সভায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আব্দুর রহমান এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর ২৫টি পৌরসভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ তারিখ ১ ডিসেম্বর, মনোনয়ন বাছাই ৩ ডিসেম্বর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেখ দিন ১০ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ হবে ২৮ ডিসেম্বর। জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর হোসেন জানান, প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভায় ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের সবকটি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More